চিকিৎসক স্ত্রী ও নিজের গায়ে দেওয়া আগুনে যুবকের মৃত্যু
তালাকনামা পাঠানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসক স্ত্রী ও নিজের গায়ে দেওয়া আগুনে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর রায়পুরায়।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খলিলুর রহমান নামে ৪০ বছর বয়সি ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে রায়পুরা থানার ওসি সাফায়েত হোসেন পলাশ জানান।
সাফায়েত হোসেন বলেন, “এর আগে রোববার দুপুরে রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের ব্রাহ্মণেরটেক গ্রামে আগুনের এ ঘটনা ঘটে।”
নিহত খলিলুর রহমান গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বেলাশী গ্রামের আতর আলী বেপারীর ছেলে।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩২ বছর বয়সি চিকিৎসক ওই নারী। তিনি ঢাকার গুলশান এলাকার শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানান, চিকিৎসক নারী ও খলিলের মধ্যে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এক পর্যায়ে তারা গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের বেশ কিছুদিন পর ওই নারী জানতে পারেন, খলিলুর পেশায় গাড়ি চালক।
বিয়ের আগে বিষয়টি খলিলুর গোপন করেছিলেন দাবি করে দুই মাস আগে ওই নারী আইনজীবীর মাধ্যমে স্বামীকে তালাকনামা পাঠান। এরপরও খলিল স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে চান।
এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে উভয়ের মতামতে গেল মাসে গ্রাম্য সালিস হয় বলে মরজাল ইউপির সদস্য তুহিন ভূঁইয়া জানান।
রোববার দুপুরে ব্রাহ্মনেরটেক গ্রামে ওই নারীর বাবার বাড়ি এসে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে স্ত্রী ও নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন খলিল। পুলিশ জানায়, স্থানীয়রা চিৎকার শুনে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে দুজনকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন।
ওই নারীকে স্বজনরা প্রথমে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠান।
অপরদিকে, দগ্ধ খলিলুরকে উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তার মৃত্যু হয় বলে পুলিশ জানায়।
দগ্ধ ওই নারীর খালু ফরহাদ হোসেন বলেন, “২ বছর আগে নিজের পছন্দে খলিলুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে মেয়েটি। বিয়ের বেশ কিছুদিন পর মেয়েটি জানতে পারেন, খলিলুর রহমান পেশায় গাড়ি চালক। বিষয়টি সে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি।”
মিথ্যে পরিচয়ে প্রতারণা করে বিয়ে করার কারণে স্বামী সঙ্গে সম্প্রতি মেয়েটির ছাড়াছাড়ি হয় বলে ফরহাদ হোসেন জানান।
এ ঘটনায় খলিলুর ক্ষিপ্ত হয়ে রোববার দুপুরের দিকে মেয়েটির বাড়িতে এসে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে নিজেও দগ্ধ হন।
রায়পুরা থানার উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন বলেন, “খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।”
শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, “নরসিংদী থেকে দগ্ধ অবস্থায় ওই নারীকে জরুরি বিভাগে আনা হলে আমরা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। তার শরীরে ৮০% দগ্ধ রয়েছে। বর্তমানে তাকে জরুরি বিভাগে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
রায়পুরা থানার ওসি সাফায়েত হোসেন পলাশ বলেন, “খলিলুর রহমানের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই নারীর পরিবার থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, “নিহতের পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”