লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার হয়নি, ব্যাংক বন্ধ থাকায় অর্থকষ্ঠে লোকজন
বান্দরবানে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছ থেকে লুট হওয়া ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫ গুলির খোজ এখনও পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার করা যায়নি ঘটনায় জড়িত কাউকে। পুলিশ বলছে, উদ্ধার অভিযান চলছে।
এদিকে থানচি, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের তিনটি করে ছয়টি শাখার কার্যক্রম গত বুধবার থেকে নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রয়েছে। যে কারণে এই তিন উপজেলার আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। এই তিন উপজেলায় দুটি ব্যাংকের মোট ছয়টি শাখা ছাড়া আর অন্য কোনো ব্যাংকের শাখা নেই।
রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় গত মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে হামলা করে অস্ত্রধারীরা ভল্টে থাকা ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা নিতে পারেনি। তবে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) নিজাম উদ্দিনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রুমা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে র্যাব। ওই দিন পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করে অস্ত্রধারীরা। এলাকাবাসীর মুঠোফোনও নিয়ে গেছে তারা। পরদিন বুধবার থানচি থানার দুটি ব্যাংকের শাখা থেকে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা লুট করে অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনায় রুমা ও থানচি থানায় পৃথক ছয়টি মামলা হয়।
নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা এসব ঘটনায় জড়িত বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কেএনএফ সদস্যরা হামলার আগে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। এতে উপজেলা পরিষদ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। অস্ত্রধারীরা বান্দরবান-রুমা সড়কের উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের অংশে দুই পাশে ব্যারিকেড দেয়।
অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে দেরির কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নূরে আলম মিনা বলেন, ‘অস্ত্র–গুলি উদ্ধারে অভিযান চলছে। এগুলো উদ্ধার না করে আমরা কি বসে থাকব?’
এদিকে বান্দরবানের রুমা, থানচি ও বোয়াংছড়ি উপজেলার ছয়টি ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঈদ ও নববর্ষ সামনে থাকায় এসব উপজেলার বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছে।
গত বুধবার সোনালী ব্যাংকের থানচি শাখায় চেক নিয়ে মাসিক বেতনের টাকা তুলতে যান থানচি উপজেলা কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম আনিসুল্লাহ মোবারক। তিনি বলেন, চেক নিয়ে ব্যাংকে ঢোকার পর দেখি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসা লোকজন পুরো ব্যাংক ঘিরে ফেলেছে। তারা অস্ত্র তাক করে রাখে, যাতে কেউ একটু শব্দও করতে না পারে। সেদিন ব্যাংক থেকে আর টাকা তুলতে পারেননি। টাকা দূরে থাক, প্রাণে বেঁচে এসেছেন এটাই তাঁর কাছে বড় সান্ত্বনা। আজ দুপুরে আনিসুল্লাহ মোবারক বলেন, ‘সামনে ঈদ। টাকা তুলতে না পারায় এখনো কিছু করা হয়নি।’
রুমা বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ব্যাংকে লেনদেন করতে না পেরে তাঁরা একেবারেই বসে আছেন।
সোনালী ব্যাংক বান্দরবান শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মনিরুল হাসান আজ সকালে বলেন, রুমা ও থানচি ঘটনার পর সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে অনলাইনে যেকোনো শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে। এ ছাড়া নগদ ও বিকাশে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা স্থানান্তর করা যাবে। কৃষি ব্যাংক থানচি উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক হাসুই থোয়াই মারমা জানালেন একই কথা।
তবে রুমা উপজেলা বাজার সমিতির সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে ব্যাংকের শাখাগুলোর লেনদেন শুরু করা উচিত।