মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ৮ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ০৪:৫০, ৯ এপ্রিল ২০২৪

দ্বন্দ্ব মেটাতে এসেছিল ফাঁড়িতে, সেখানেই খুন হলো যুবলীগ নেতা

দ্বন্দ্ব মেটাতে এসেছিল ফাঁড়িতে, সেখানেই খুন হলো যুবলীগ নেতা

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পূর্ব শত্রুতা মেটাতে দুপক্ষকে ডাকা হয় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখানে যেতেই ফাঁড়ির ইনচার্জের উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক নেতা।

সোমবার দুপুরে উপজেলার দিঘিরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

নিহত সোহরাব খান (৬০) ওই এলাকার প্রয়াত নুর মোহাম্মদ খানের ছেলে ও দিঘিরপাড় ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি। প্রতিপক্ষের হামলায় তার ছেলে জনি খানও (৪০) গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার পর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই শাহ আলমকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মাসখানেক আগে দিঘিরপাড় ইউনিয়নের মূলচর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ভোলা হাওলাদারের সঙ্গে সোহরাব খানের বিরোধ হয়। তখন সোহরাব খান ভোলাকে ঝাড়ু দিয়ে পেটান। সেই বিরোধের বিষয়ে দু’পক্ষকে তদন্ত কেন্দ্রে ডাকেন ইনচার্জ এসআই শাহ আলম। শাহ আলমের ডাকে সারা দিয়ে সেখানে যান সোহরাব খান, তার ছেলে জনি খান ও সেলিম সরকার নামে তাদের দোকানের এক কর্মচারী।

সেখানে ভোলা হওলাদারের ছেলে রিহান ও রিজভী তার সহযোগীদের নিয়ে কুপিয়ে জখম করে সোহরাব খান ও তার ছেলে জনি খানকে।

সোহরাব খানের দোকানের কর্মচারী প্রত্যক্ষদর্শী সেলিম সরকার বলেন, “দিঘিরপাড় তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শাহ আলম মোবাইল ফোনে সোহরাব খানকে তদন্ত কেন্দ্রে আসতে বলেন। এ সময় আমি ও তার ছেলে জনি খান সঙ্গে আসি।

“সামনে আসা মাত্রই তদন্ত কেন্দ্র থেকে বের হয়ে রিহান-রিজভীসহ ১০/১২ জন সোহরাব খান ও জনি খানকে কোপাতে থাকে। তাদের রক্ষা করতে গেলে আমাকেও কোপাতে আসে তারা।”

পরে তাদের উদ্ধার করে টঙ্গীবাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহরাব খানকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় জনি খানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির আবাসিক চিকিৎসক নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তি মারা যান। তার মাথায় ও বুকে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া আহত জনি খানের মাথায়, বুকে ও পেটে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা দিঘিরপাড় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে বেলা ৩টা পর্যন্ত ইনচার্জ শাহ আলমকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। কয়েকশ জনতা ওই তদন্ত কেন্দ্রের চারপাশে অবস্থান নেন। অবস্থান নেয় শতাধিক পুলিশও। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা কেন্দ্রটির ইনচার্জ শাহ আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

পরে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বেলা সোয়া ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে যান। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা তদন্ত কেন্দ্র এলাকা ত্যাগ করেন।

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল হোসেন সরকার বলেন, “জড়িত তাদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে যদি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকেন, তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না, আইনের আওতায় আনা হবে।”

তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শাহ আলমকে স্থানীয় জনতা অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, “অবরুদ্ধ নয়, যেহেতু তার ওপরে জনতা কিছুটা ক্ষুদ্ধ তাই তাকে আমরা সেফ জোনে রেখেছি।”

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান মোবাইল ফোনে বলেন, “সোহরাব খানের সঙ্গে ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ভোলা হাওলাদারের আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। সেই বিরোধের জেরে ভোলার দুই ছেলে রিজভী ও রিহানসহ ৭-৮ জন সোহরাব ও তার ছেলে জনির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।”

পুলিশ জানায়, সাবেক যুবলীগ নেতা সোহরাব খানের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা ও তার ছেলে জনির বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা আছে। 

টঙ্গীবাড়ি থানার ওসি মোল্লা সোয়েব বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়