রংপুরে ইমাম নিয়ে দ্বন্দ্ব: ঈদগাহে নামাজে নিষেধাজ্ঞা
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ইমাম নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বে ঈদগাহ মাঠে নামাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
এ কারণে উপজেলার ইটাকুমারী পূর্বপাড়া ঈদগাহ মাঠে এবার আর রোজার ঈদের নামাজ হচ্ছে না বলে পীরগাছা থানার ওসি সুশান্ত কুমার সরকার জানান।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুপক্ষের মধ্যে মীমাংসা না হওয়ায় একটি পক্ষ ইটাকুমারী হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এবং আরেক পক্ষ ইটাকুমারী হাজীপাড়া জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, ইটাকুমারী, ইটাকুমারী পূর্বপাড়া, শাহপাড়া, আমতলী, জগদীশ, পঞ্চাননসহ প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষের নামাজের জন্য ছয়টি মসজিদ রয়েছে। তবে ওই গ্রামগুলোর মানুষ একত্রে দীর্ঘদিন ধরে দুই ঈদের নামাজ আদায় করছেন ইটাকুমারী পূর্বপাড়া ঈদগাহ মাঠে।
পাঁচ বছর আগে জগদীশ আমতলী মসজিদের ইমাম মাওলানা শহিদুল ইসলামকে ওই ঈদগাহ মাঠের ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার ইমামতিকে কেন্দ্র করে তিন বছর আগে ১০ গ্রামের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
এক পক্ষ ইমামের পরিবর্তন চান; আরেক পক্ষ ইমামকে বহাল রাখতে চান। এ নিয়ে বহুবার দুপক্ষের মধ্যে বৈঠকেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। বিগত বছর ইটাকুমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাশার দুই পক্ষের জন্য ওই মাঠেই পৃথক দৃটি জামাতের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সময় নির্ধারণকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে তখন হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এবার রোজার ঈদের নামাজকে কেন্দ্র করে আবারও দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এবং বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের কাছে যায়।
উপজেলা প্রশাসন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে দুইপক্ষকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেও কোনো সুরাহা করতে পারেনি। তৃতীয় পক্ষ থেকে ইমাম দেওয়ার কথা বলা হলেও একটি পক্ষ তা মানতে নারাজ।
সোমবার আবারও বৈঠকে বসে সমাধান না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থে ওই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে উপজেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, “বিবাদমান দুইপক্ষের মধ্যে মতানৈক্য থাকায় উভয় পক্ষকে একটা সিদ্ধান্তে আসার জন্য কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তারা এক হতে পারেননি। তাই ওই মাঠে ঈদের জামাত বন্ধ থাকবে।”
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ৫৫ বছর আগের এই ঈদগাহ মাঠ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা এখন বিরাট আকার ধারণ করেছে। যার ফলে আমরা সাধারণ মানুষ বেশ বিপাকে পড়েছি। এখন দুই পক্ষ দুই জায়গায় নামাজ আদায় করবে।”
আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমরা তো সাধারণ মানুষ ভাই; আমাদের কথা কে শোনে? আমাদের জন্য হয়েছে বড় সমস্যা। এ সমস্যা প্রায় ৫০-৫৫ বছর থেকে চলে আসছে।”
ইটাকুমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাশার বলেন, “আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধানে আসার চেষ্টা করছি। কিন্তু কেউ রাজী হচ্ছেন না। সেখানে আমাদের কী করার আছে?”
পীরগাছা থানার ওসি সুশান্ত কুমার সরকার বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা চাই, উভয়পক্ষই নামাজ আদায় করুক।”