শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪ , ৩ কার্তিক ১৪৩১

ইউএনবি

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ১২ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১০:৩৬, ১৩ এপ্রিল ২০২৪

ফুল উৎসর্গের মাধ্যমে শুরু হয়েছে পাহাড়িদের বৈসাবি উৎসব

ফুল উৎসর্গের মাধ্যমে শুরু হয়েছে পাহাড়িদের বৈসাবি উৎসব

পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলায় নদী-হ্রদে ফুল দিয়ে গঙ্গা দেবীকে পূজা করার মধ্যে দিয়ে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ৩ দিনের পাহাড়ে ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি। আজ চাকমা নৃগোষ্ঠীর বিজু উৎসব এবং ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর হারি বৈসু।

গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল উৎসর্গ করার মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের প্রধানতম সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব পাহাড়ে বর্ষবরণ উৎসব ‘বৈসাবি’ শুরু হয়েছে।

এদিনটিতে মূলত চাকমা নৃগোষ্ঠীর মানুষ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করে থাকেন। ফুলের অধিক ব্যবহার হয় বলে চাকমারা বলে ‘ফুল বিজু’।

শুক্রবার ভোরে খাগড়াছড়ি সদরের খবংপুড়িয়া এলাকায় চেঙ্গী নদীতে ফুল উৎসর্গ করতে শত শত চাকমা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, নানা বয়সী নারী-পুরুষ ভিড় জমান। সবাই দলবদ্ধ হয়ে কলা পাতায় ফুল সাজিয়ে নদী তীরে নানা রঙের ফুল গঙ্গা দেবতাকে উৎসর্গ করেন। ফুলে ফুলে বর্ণিল হয়ে উঠে চেঙ্গী নদীর দু’পাশ। এর আগে সূর্যোদয়ের আগেই শিশু-কিশোররা হল্লা করে ফুল তুলতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।

এছাড়া পাহাড়ি পল্লীর বিভিন্ন খাল ও প্রাকৃতিক ছড়াও ফুলে ফুলে ভরে যায়। শিশুরা নদীতে আনন্দ উল্লাস করে নতুন বছরকে আহ্বান জানায়। তারা ফুল দিয়ে সাজায় ঘরবাড়ির আঙ্গিনা।

আজ সকালে চেঙ্গী নদীতে ফুল পূজা করে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মানুষ ‘বৈসু’ উৎসবের সূচনা করে। আর পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হবে মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ উৎসব । এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।

রাঙ্গামাটি রাজবাড়ি ঘাটে বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে আজ ভোরে গ্রামের তরুণ-তরুণীরা ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে ৩ দিন উৎসবের সূচনা করা হয়। অন্যদিকে সকালে গর্জনতলীতে ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসবের উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটি সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার।

এ সময় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিদ্যুৎ শংকর ত্রিপুরাসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবি উৎসব। আর বৈসাবি উৎসব পার্বত্য অঞ্চলের সব সম্প্রদায়কে এক করে দিয়েছে। পাহাড়ে সকল সম্প্রদায়ের এ যেন মিলন মেলা। এই উৎসবের মধ্যেমে পার্বত্য অঞ্চলে সব সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হবে।

অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘বৈসাবি উৎসবকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটিসহ ৩ পার্বত্য জেলায় উৎসবের উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছে। এই ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়েই শুরু হয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর ৩ দিনব্যাপী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু। আগামীকাল শনিবার মূল বিজু পালিত হবে। রবিবার গজ্যাপজ্য পালিত হবে যার যার ঘরে।’

বৈসাবির উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এই ৩ দিনে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকবে পার্বত্য অঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের মানুষ। আগামীকাল মূল বিজুর উৎসব পালন করবে পাহাড়ের জনগোষ্ঠী। ঐতিহ্যবাহী পাঁজন রান্না করে অতিথি আপ্পায়নের মধ্যে দিয়ে হবে মূল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে সপ্তাহব্যাপী সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্যে দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়