বান্দরবানের থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র ও অর্থ লুটের ঘটনায় বান্দরবানে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে তিন উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন শুক্রবার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, “যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
“জেলার যেসব এলাকায় যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলমান থাকবে বা চলবে; ওই এলাকার সব পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।”
এদিকে রুমা উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটক গাইড, পরিবহন মালিক এবং হোটেল-মোটেল মালিক সমিতিকে দেওয়া এক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, “যৌথ বাহিনীর অভিযানকালে রুমা উপজেলার পর্যটন এলাকাসমূহে যে কোনো ধরনের পর্যটক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হল।
তাছাড়া ভ্রমণে ‘নিরুৎসাহিত’ করার পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্টদের চারটি বিষয় মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রুমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ দিদারুল আলম স্বাক্ষরিত নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- যৌথ বাহিনীর অভিযানকালে কোনো হোটেল-মোটেলে পর্যটককে কক্ষ ভাড়া দেওয়া যাবে না। কোনো ট্যুরিস্ট গাইড পর্যটকদের কোনো পর্যটন কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারবে না। কোনো জিপ গাড়ি পর্যটকদের পর্যটক কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারবে না এবং নৌপথে কোনো পর্যটকদের পর্যটন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন বলেন, “থানচিতেও পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবাইকে মিটিং করে বলা হয়েছে, পর্যটন কেন্দ্রে কোনো পর্যটক ভ্রমণে আসতে পারবেন না। যেহেতু এখানে অভিযান চলছে। তবে এটা সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে তখন আবার আগের মত ভ্রমণ করতে পারবে।”
২০২২ সালের অক্টোবরে পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ নামে সশস্ত্র তৎপরতার কারণে রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলা একে একে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে। পরে পর্যায়ক্রমে তিনটি উপজেলা থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও রোয়াংছড়ি থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় এ বছরে জানুয়ারি দিকে।
এখন তিন মাস পার না হতেই আবারও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ল পর্যটন এলাকার তিন উপজেলা।
কী ঘটেছিল
২ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে এবং ৩ এপ্রিল বুধবার দুপুরে বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন। তারা টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লুট করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি।
রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা-ডাকাতি এবং ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণের ঘটনাটি মঙ্গলবার রাতে প্রথম ভাগে ঘটলেও; থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা হয়েছে ভরদুপুরে।
দুটি ঘটনাতেই পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ এর নাম এসেছে; যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত।
এ নিয়ে দিনভর দুই উপজেলার মানুষের ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাপস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করে র্যাব।
পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ১৬ ঘন্টার ব্যবধানে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি, অর্থ লুটের ঘটনায় সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ জড়িত বলে জানানো হয়। এরপর থেকে রুমা ও থানচি এলাকায় কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৫৮ জনকে গ্রেপ্তারে খবর জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে রুমা থানায় ৫টি এবং থানচি থানায় ৪টি।