মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১

খুলনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ৪ মে ২০২৪

আপডেট: ২২:৪৭, ৪ মে ২০২৪

নেভেনি সুন্দরবনের আগুন, রাতে আরও ছড়িয়ে পড়ার আশংকা

নেভেনি সুন্দরবনের আগুন, রাতে আরও ছড়িয়ে পড়ার আশংকা

বন বিভাগ দাবি সুন্দরবনে লাগা আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে সরেজমিন শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকেও বনের মধ্যে অর্ধশতাধিক স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। আলো না থাকায় পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসও।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের ভাষ্য, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন বনাঞ্চলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান তাঁরা। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে বালতি ও কলসি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন।

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে আগুন ঠিক কখন, কেন এবং কীভাবে লেগেছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলতে পারেনি বন বিভাগ। তারা বলছে, আগুন নিয়ন্ত্রণ এখন প্রথম কাজ। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

তবে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, তাঁদের ধারণা, আগুন লাগছে অন্তত দুদিন আগে। ঘটনাস্থল বন বিভাগের অফিস থেকে বেশ দূরে। ওই এলাকায় বাঘসহ বন্য প্রাণীর উপস্থিতি অনেক বেশি। তাই মানুষের প্রবেশ কম। এ জন্য খবর পেতে দেরি হয়েছে।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধারা বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রাম আমোরবুনিয়া। গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভোলা নদী পার হলেই সুন্দরবন। বনের ওই এলাকা জিউধারা স্টেশনের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির অন্তর্গত। ফাঁড়ি অফিসের দক্ষিণ দিকের ছোট ছিলাপথ ধরে প্রায় আড়াই কিলোমিটার যাওয়ার পর আগুনের আঁচ পাওয়া যায়। সেখানকার লতিফের ছিলা এলাকার কয়েক কিলোমিটার এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তবে পানির উৎস (নদী) দূরে থাকায় ফায়ার সার্ভিস সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে পানি দিতে পারেনি। রাত নামায় বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজন ফিরে আসছেন বন থেকে।

বনে আগুনের খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন মোরেলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তারেক সুলতান। পৌনে চারটার দিকে আগুনের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসককে জানান। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসকে জানিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ইউএনও বলেন, ‘এখানে দেখলাম আগুনটা বেশ বিস্তৃত। ঘটনাস্থল বেশ দুর্গম হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস পৌঁছালেও তাদের পাম্প মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করতে পারেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছেন।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক (বাগেরহাট) মো. সাইদুল আলম চৌধুরী আজ ও কালকে বলেন, আগুনের খবর পেয়ে মোরেলগঞ্জ ও মোংলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। রাতের অন্ধকার ও বনের মাঝে বন্য প্রাণীর ঝুঁকি থাকায় আগামীকাল সকাল থেকে তাঁরা কাজ শুরু করবেন।

রাতে আগুন আরও ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুনে জ্বলতে থাকা এলাকায় যাওয়ার সময় বনের মধ্যে দেখা গেছে, বানর ও বনমোরগের ছোটাছুটি। এ সময় তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি ও চিৎকার করছিল।

আগুন লাগা এলাকায় মূলত বলা, সুন্দরী, বাইন, গেওয়া, জিন, সিংড়াসহ বিভিন্ন ধরনের লতাগুল্মজাতীয় গাছ বেশি। এরই মধ্যে বেশ কিছু বলা বন পুড়ে গেছে। আগুন যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এ জন্য স্থানীয় লোকজন নিয়ে বন বিভাগ কিছুটা পাতার স্তূপ সরালেও গভীর ফায়ার লাইন কাটতে পারেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফায়ার লাইন কেটে যেহেতু পানি দিয়ে দেওয়া যায়নি, রাতে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়বে।

বনের মধ্যে কথা হয় স্থানীয় মধ্য আমোরবুনিয়া গ্রামের শহিদুল ফরাজীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে খবর শুনে ফরেস্টারদের নিয়ে দা, কলস, বালতিসহ আমরা বনে ঢুকি। সেই থেকে কাজ করছি। কিন্তু আগুন নেভাতে পারিনি। এখনো জ্বলছে। থেকে থেকে জ্বলে ওঠে।’

স্থানীয় ভিলেজ কনজারভেশন ফোরামের (ভিসিএফ) সদস্য মহিদুল হাওলাদার অবশ্য দাবি করেন, আগুন লেগেছে কয়েক দিন আগে। তিনি বলেন, অন্তত এক-দুই দিন আগে আগুন লাগে। এখন ছড়ায়ে পড়ছে। অন্তত ৫ বিঘা এলাকায় আগুন ছড়াইছে। এখন বড় আগুন নেই। তবে বাতাসে তা দ্রুত আরও বিস্তৃত এলাকায় ছড়ায় পড়তে পারে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, খবর পেয়ে বন বিভাগের আশপাশের বিভিন্ন ইউনিট, কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপ (সিপিজি), ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) সদস্যসহ স্থানীয় বাসিন্দা, নারী-পুরুষ সবাই মিলে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। ফায়ার সার্ভিস এসেছে। তবে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে এবং পানির উৎস ভোলা নদী দূরে হওয়ায় তারা কাজ শুরু করতে পারেনি।

ডিএফও বলেন, ‘আগুনে আতঙ্কিত হওয়ার মতো অবস্থা নেই। কীভাবে আগুন লাগল, তা এখন নিশ্চিত না। আমাদের এখন প্রথম দায়িত্ব হলো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা, নির্বাপণ করা। এরপর অনুসন্ধানে কমিটি করা হবে। তদন্তের পর বিস্তারিত আমরা জানাতে পারব।’ আগুনের বিস্তৃতি বা কী পরিমাণ এলাকা পুড়ে গেছে, সে বিষয়েও ডিএফও নুরুল করিম তাৎক্ষণিক কিছু জানাতে রাজি হননি।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবু তাহের মিয়া বলেন, বেশ বড় এলাকাতেই আগুন লেগেছে। অন্তত তিন কিলোমিটার হবে আগুন ছড়াইছে। সবাই চেষ্টা করছে। তবে যেভাবে লাগছে, তাতে আগুন থামানো কঠিন আছে। মাটির নিচ দিয়ে নিচ দিয়ে গিয়ে জ্বলে উঠছে। শুকনো পাতার কারণে আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে। বাতাস বাড়লে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়