মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:০২, ১৭ জুন ২০২৪

ডুবে গেছে কুড়িগ্রাম শহর, ঈদের জামাত ও পশু কোরবানী নিয়ে বিপাকে

ডুবে গেছে কুড়িগ্রাম শহর, ঈদের জামাত ও পশু কোরবানী নিয়ে বিপাকে

অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলজটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের জামাত ও পশু কোরবানি নিয়েও চরম ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, শহরের দুটি খাল দখল হওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে।

কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, রোববারের আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আগামী কয়েকদিন আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃষ্টিতে জেলার সব কটি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার দুপুর ১২টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ৩৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এর মধ্যে রোববার পৌরসভার একাধিক ওর্য়াডে সরেজমিনে দেখা যায়- জজকোর্ট, কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠ, জেলা প্রশাসন কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল পাড়া, শিক্ষা অফিস, রৌমারী পাড়া, গণপূর্ত অফিস, তালতলা, হরিকেশ কানিপাড়া, হাটিরপাড়, স্বাধীন পাড়া, পৌরবাজার এলাকা, মধুর মোড়, ঘোষপাড়া, দাদামোড়সহ পৌর শহরের অনেক স্থানে রাস্তাঘাট ও বাসা-বাড়িগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার কারণে বিকাল পর্যন্ত থৈ থৈ পানিতে ভাসছিল।

এসব এলাকায় দেখা যায় ড্রেনগুলোতে দীর্ঘদিনের প্লাস্টিক বর্জ্য, মাটি, ময়লা আর্বজনা জমে থাকায় বৃষ্টির পানি সহজে নামতে পারছে না।

কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার দক্ষিণ হাসপাতাল পাড়ায় প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের বসবাস। এখানে পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে প্রায় ৭০টি। কিন্তু এলাকায় শুকনো কোনো জায়গা না থাকায় কোরবানি নিয়ে শঙ্কায় আছেন বাসিন্দারা।

ঐ এলাকার বাসিন্দা গণমাধ্যম কর্মী শাহীন আহমেদ বলেন, তারা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তার জলাবদ্ধ হয়ে আছেন। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে একদিন পরে কোরবানির কথা ভাবছেন তিনি। আর তা না হলে পার্শ্ববর্তী কোনো উঁচু স্থানে পশু জবাই করতে নিয়ে যেতে হবে। এতে অনেক বিড়ম্বনা ও কষ্ট ভুগতে হবে তাদের। এছাড়া এ এলাকাবাসীর আর কোনো উপায়ও নেই।

হাটিরপাড় এলাকার ব্যবসায়ী মাহফুজার রহমান জানান, “জলজটের কারণে ঘরে পানি উঠার অবস্থা। আঙ্গিনা ও রাস্তা সর্বত্রই পানি। কোরবানি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। কাছাকাছি কোনো উঁচু স্থান খুঁজে পশু কোরবানির চেষ্টা করবো। শেষ পর্যন্ত কি হবে সবই অনিশ্চিত।”

খলিলগঞ্জ এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, “জলাবদ্ধতার কারণে মসজিদে ঈদের জামাত হলেও পশু কোরবানি নিয়ে বিড়ম্বনায় আছি। ঈদের দিন রাস্তায় যানবাহন হয়তো খুব একটা থাকবে না তাই হয়তো রাস্তায় কোরবানি করতে হবে। পরবর্তীতে মাংস কাটাকাটি বাড়ির ছাঁটে করবার পরিকল্পনা করছি।”

পৌরবাজারের ক্রেতা আরিফুর রহমান বলেন, “বাজারের পাশের ড্রেনটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে আছে। পৌরসভার লোকজন এসব দেখে না। তিন দিন ধরে রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার কারণে চলতে লোকজনের বেশ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু পানি সরাতে কারও কোনো উদ্যোগ নেই। “

কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ বলেন, “পৌর শহরের বৃষ্টির পানি নামতো পৌরসভার ঈদগাঁহের পাশের নালা দিয়ে। কিন্তু এটি ভরাটের কারণে পানিগুলো আর নামতে পারছে না। ফলে এমন জলজটের সৃষ্টি হয়েছে।

“এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা যুগোপযোগী না করা এবং সর্বপরি পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর অদূরদর্শিতা দায়ী।” তবে পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, “এ দুর্ভোগ সাময়িক এবং প্রাকৃতিক কারণে হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করছে। দ্রুত সময়ে জনদুর্ভোগ নিরসন হবে আশা করি।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, “রাতে বৃষ্টি না হলে এবং সোমবার আবহাওয়া ভালো থাকলে ঈদ নামাজ এবং পশু কোরবানিতে খুব একটা সমস্যা হবে না।

“তবুও সকল মসজিদে ঈদের জামাতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে মানুষ থাকলে প্রতি মসজিদে একাধিকবার জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে।” এর মধ্যে মসজিদ কমিটি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় সময় নির্ধারণ করে প্রচার চালানো হচ্ছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়