মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:১৩, ১৭ জুন ২০২৪

সেই রোহিঙ্গা বলছেন, গুলি নয়, নৌকায় উঠতে গিয়ে আহত হয়েছেন

সেই রোহিঙ্গা বলছেন, গুলি নয়, নৌকায় উঠতে গিয়ে আহত হয়েছেন

গুলিতে নয়, সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে নৌকায় উঠতে গিয়ে পা কেটে আহত হয়েছেন বলে এখন দাবি করছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেই রোহিঙ্গা যুবক আলী জোহার।

এর আগে শুক্রবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলী জোহার দাবি করেছিলেন, সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে করে টেকনাফে আসার পথে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন।

যদিও এই দাবি তখন বিশ্বাস হয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসনসহ সেন্ট মার্টিনের জনপ্রতিনিধিদের। তারা বরং সন্দেহ করছিলেন, আলী জোহার মিয়ানমারের সংঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কৌশলে পালিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন।

রোববার তাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছে। পুলিশ বলছে, আলী জোহারের বিরুদ্ধে মাদক পাচারের মামলা রয়েছে। তাই তাকে আদালতে তোলা হবে।

আলী জোহারের ভাষ্য, উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা তিনি। বাবার নাম হামিদ হোসেন। তার পরিবার ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে উখিয়ায় এসে আশ্রয় নেয়। তিনি এক মাস আগে কাজের উদ্দেশে সেন্ট মার্টিনে যান।

সম্প্রতি টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের নৌপথে চলাচলকারী কয়েকটি ট্রলারে টানা কয়েকদিন গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ কারণে টানা আট দিন এ নৌপথে যানচলাচল বন্ধ ছিল।

পরে বৃহস্পতিবার বঙ্গোপসাগর দিয়ে বিকল্প পথে সেন্ট মার্টিনে আটকাপড়াদের চারটি বড় ট্রলারে করে টেকনাফে নিয়ে আসা হয়। সেই ট্রলারগুলো উপকূলে আসতে পারেনি। পরে ছোট ছোট ট্রলারে করে যাত্রীদের উপকূলে নিয়ে আসা হয়।

এর একটি ট্রলারে নিজেও ছিলেন দাবি করে দুপুরে কক্সবাজার সদর থানার সামনে আলী জোহার সাংবাদিকদের বলেন, “বড় ট্রলার থেকে ডিঙ্গি নৌকায় উঠার সময় পা পিছলে আহত হওয়ার পর পরই আমি অবচেতন হয়ে যাই। পরে জ্ঞান ফেরার পর দেখি, কুতুপালংয়ের এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”

অথচ শুক্রবার আলী জোহার বলেছিলেন, সেদিন তিনি সরকারি ব্যবস্থাপনার ট্রলারে উঠতে পারেননি। পরে ওইদিন বিকালে ৩০ জন একজোট হয়ে একটি কাঠের ট্রলার ভাড়া করে রওনা দেন। কথা ছিল শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাশ দিয়ে তীরে ওঠার। কিন্তু ট্রলারের মাঝি সেটা না মেনে তাদেরকে নিয়ে যান শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব পাশের ঘাটের দিকে।

নাফ নদীর ৫ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। আর গুলি লাগার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তারপর আর কিছু বলতে পারেন না।

সেদিন তাহলে মিথ্যা বলেছিলেন কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আলী জোহার বলেন, “ঘটনায় আহত হওয়ার পরপরই আমি অবচেতন হয়ে যাই। অসুস্থ অবস্থায় আমি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলাম। এ কারণে সীমান্তে অস্থির পরিস্থিতিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলাম ভেবে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়েছিলাম।

“কিছুটা সুস্থ হলে সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে একসঙ্গে আসা অন্য সহকর্মী শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপের পর ঘটনার প্রকৃত কারণে জানতে পেরেছি”, বলেন ওই রোহিঙ্গা যুবক।

এ সময় সেখানে থাকা কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান বলেন, “রোববার বিকালে এই রোহিঙ্গা যুবককে চিকিৎসা শেষে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয়েছে এই রোহিঙ্গা যুবক একটি মাদক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। তাকে সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।”

যুবকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার তথ্য ছড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমরা পুলিশ সুপারের নির্দেশে তৎপরতা শুরু করি। খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি, হয়তো বড় ট্রলার থেকে ছোট ট্রলারে নামার সময় অসাবধানতাবশত পা পিছলে আহত হয়েছে। সে সেটা বলতে পারে না, কারণ তখন অজ্ঞান ছিল।

“আমরা চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও বলেছেন, এটা গুলিব্দ্ধি নয়, কাট ইনজুরি। কোনো কারণে হয়তো সে মিথ্যা কথা বলেছিল, কিন্তু গুলির কোনো ঘটনা সেখানে ছিল না।”

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আশেকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আহত রোহিঙ্গা যুবক গুলিবিদ্ধ নন। ধাতব বস্তু দ্বারা তিনি আঘাতপ্রাপ্ত। সুস্থ হওয়ার পর যুবককে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।”
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়