সৈয়দপুরে এসিআই’র ৯৯ টন নিষিদ্ধ ঘোষিত বালাইনাশক উদ্ধার : গ্রেপ্তার ১
নীলফামারীর সৈয়দপুরে এসিআই কোম্পানির ৯৯ টন নিষিদ্ধ ঘোষিত বালাইনাশক ব্রিফার জি-৫ (কার্বোফুরান) উদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) বেলা একটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, র্যাব-১৩ এবং থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর একটি গোডাউন থেকে ওই পরিমাণ বালাইনাশক উদ্ধার করে।
যেগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য এক কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বালাইনাশকগুলো জব্দ করে গোডাউনে রেখে সেটি সীলগালা করা হয়। এ সময় গোডাউনের ভাড়াটিয়া শহরের
বঙ্গবন্ধু সড়কের মেসার্স মনোয়ার ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী মো. মনোয়ার হোসেনকে (৫৮) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মনোয়ার হোসেন সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কুমারগাড়ী মৃত. মমতাজ হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ধীমান ভুষন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২৫(২) ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ধীমান ভুষন তাঁর দপ্তরে বসে দৈনন্দিন দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। এ সময় তিনি গোপন খবরের ভিত্তিতে জানতে পারেন সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরী ভেতরে একটি গোডাউনে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ ঘোষিত বালাইনাশক মজুদ রয়েছে। এরপর তিনি ঘটনাটি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন। পরবর্তীতে তিনি বেলা আনুমানিক একটার দিকে ঘটনার বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি শহরের কীটনাশক ব্যবসায়ী শহরের মেসার্স মনোয়ার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মনোয়ার হোসেনকে দেখতে পান। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিসিক শিল্পনগরীর দ্বিতীয় ব্লকের গোডাউনে বালাইনাশক রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। পরবর্তীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে নির্দেশে সৈয়দপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে এবং রংপুর, র্যাব-১৩, সিপিসি -২ ক্যাম্পের র্যাব সদস্য ও থানা পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর দ্বিতীয় ব্লকে মনোয়ার হোসেনের ভাড়া করা একটি গোডাউনে এসিআই কোম্পানির ৯৯ টন নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্রিফার জি-৫ (কার্বোফুরান) উদ্ধার করা হয়েছে। প্লাষ্টিকের প্যাকেটে দুই কেজি ওজনের পাঁচ হাজার পাঁচ শত প্যাকেট, যার ওজন ১১ হাজার কেজি এবং বাজার মূল্য ১৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আর এক কেজি ওজনের প্যাকেট ৮৮ হাজার, যার ওজন ৮৮ হাজার কেজি এবং মূল্য এক কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। উদ্ধারকৃত মোট বালাইনাশকের পরিমাণ ৯৯ টন এবং বাজার মূল্য এক কোটি ৬৭ রাখ ৭৫ হাজার টাকা। পরে উদ্ধারকৃত বালাইনাশক (ব্রিফার-৫ জি) জব্দ করে ওই গোডাউনে রেখে সীলগালা করা হয়েছে। এছাড়াও সীলগালাকৃত গোডাউনটি সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা মশিউর রহমানের হেফাজতে দেওয়া হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র মতে, ব্রিফার-৫ জি (কার্বোফুরান) নামের বালাইনাশক প্রাণীর জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। ২০১৬ সালে জাতিসংঘ এটি নিষিদ্ধ করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। বিশ্বের ৮৭টি দেশ ওই বালাইনাশকটি নিষিদ্ধ করে। গত বছরে জানুয়ারীতে ৮৮তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কার্বোফুরান নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে এটি আর ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গত ৩১ জুলাই সরকারের বালাইনাশক বিষয়ক জাতীয় কারিগরী কমিটির (পিটাক) সভায় ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কার্বোফুরান ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এটি ব্যবহার করলে মাজরা পোকাসহ ক্ষেতের অনেক উপকারী পোকা মারা যায়।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ধীমান ভুষন বলেন, জব্দকৃত এ সব কার্বোফুরানের বাজারমূল্য ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার তিনি নিজে বাদী হয়ে সৈয়দপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহা আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান মামলার আসামীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।