সাঈদকে বিদায়কালে মা বললেন, ’যা বাবা, ভালো থাকিস’, মুইও তোর কাছোত আসিম’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে নিহত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর নালিপাড়া গ্রামে আজ বুধবার সকালে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
শেষবারের মতো সন্তানের মুখ দেখার জন্য মা মনোয়ারা বেগমকে ডাকা হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে তিনি ‘যা বাবা, ভালো থাকিস। চিন্তা করিস না। মুইও তাড়াতাড়ি তোর কাছোত আসিম’ বলে ছেলেকে চিরবিদায় জানান।
আবু সাঈদের কফিন ঘাড়ে করে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির অদূরের জাফরপাড়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে। সেখানে প্রশাসনের দেওয়া পূর্বনির্ধারিত সময় সকাল ৯টার আগেই জানাজায় উপস্থিত লোকজন লাইনে দাঁড়ান।
এ সময় সেখানে বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল হাসান, নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন সফিক আশরাফ, শিক্ষার্থী আতিব আল মুবিন, জাফরপাড়া মসজিদের খতিব আজহার আলী, স্থানীয় বাসিন্দা রজব আলী ও সোহানুর রহমান। ইউএনও ছাড়া বাকিরা আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়, সেই দাবি জানান।
ঘড়ির কাঁটায় ৯টা বাজতেই জানাজা পড়ানোর তাগিদ দেন ইউএনও। কিন্তু বাদ সাধেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁরা অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় চেয়ে বলেন, রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক জানাজায় শরিক হতে পথে আছেন। কিন্তু ইউএনও এতে সায় না দিয়ে দ্রুত জানাজা পড়াতে বলেন। এতে খানিকটা হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে ইউএনওর নির্দেশে হট্টগোলের মধ্যেই কিছু লোক নিয়ে জানাজা শুরু করা হয়।
তখন উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন হাত উঁচিয়ে স্লোগান দেন, ‘আমার ভাই মরল কেন? জবাব চাই, বিচার চাই’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে’ ইত্যাদি। হট্টগোলের মধ্যেই ইউএনও জানাজা শেষ করে লাশ দাফনের উদ্দেশ্যে নিতে চাইলে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
ইউএনও তখন লাশ সেখানে রেখে ঘটনাস্থল ছেড়ে যান। এরপর মাদ্রাসা মাঠে লাশ ঘিরে টানা অন্তত ১০ মিনিট স্লোগান চলতে থাকে। সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কিছু শিক্ষক–শিক্ষার্থী এলে দ্বিতীয় দফায় জানাজা হয়। সোয়া ১০টার দিকে নিহত আবু সাঈদের লাশ বাবনপুর নালিপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ির পাশে দাফন করা হয়।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যোগ দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রংপুরে পুলিশের ছোড়া গুলিতে মারা যান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।