মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ২১ আগস্ট ২০২৪

ফেনীতে বন্যায় ২শ’ প্লাবিত, প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি

ফেনীতে বন্যায় ২শ’ প্লাবিত, প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি

ফেনীতে তৃতীয় দফার বন্যায় জেলার ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া উপজেলায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এদিকে জেলায় প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ায় একজন নিখোঁজ রয়েছে। সিলোনীয়া নদীর একটি পয়েন্টে নতুন করে বাঁধ ভেঙেছে।

প্রধান সড়ক ২ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সড়ক যোগাযোগ।

এর মধ্যে জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।

ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, টানা বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৭টি ভাঙা অংশ দিয়ে হু-হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে।

তিনি জানান, গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া ২৬টির সঙ্গে এবার নতুন করে আরও একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসসহ একাধিক সংস্থা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব বলেন, প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ায় একজন নিখোঁজ রয়েছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ডিঙি নৌকা দিয়ে প্রায় ১০০ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য সেনাবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া গ্রামের শহিদুল্লাহ চৌধুরী কিসমত বলেন, “জন্মের পর এমন বন্যা কখনও দেখিনি। মঙ্গলবার বিকালে বাড়ির উঠানে পানি থাকলেও বুধবার সকাল থেকে ঘরে পানি ঢুকে যায়। পানিবন্দি হওয়ায় ছেলে-মেয়েদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।”

একই গ্রামের নাসরিন বেগম বলেন, চুলা পানিতে ডুবে গেছে। মঙ্গলবার থেকে রান্না হচ্ছে না। বাড়ির সবাই না খেয়ে আছে। কেউ কোনো ধরনের সাহায্য করছে না।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, “উপজেলায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছে।”

তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ফায়ার সার্ভিস এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় দুইটা ডিঙি নৌকা দিয়ে বন্যার্তদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের সহায়তায়ও উদ্ধার কাজ শুরু হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের নিকট আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৮ টন চাল মজুদ রয়েছে।”

বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবক মাহবুবা তাবাচ্ছুম ইমা বলেন, দু-দিন ধরে তারা শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করছেন। তবে পানি বেশি থাকায় ডিঙি নৌকায় উদ্ধার অভিযান চালানো যাচ্ছে না। স্পিডবোট ছাড়া ফুলগাজী-পরশুরামের দুর্গত এলাকাগুলোতে যাওয়া সম্ভব নয়।

পরশুরামের শালধর গ্রামের আবু ইউসুফ বলেন, “বেশিরভাগ এলাকার একচালা ও পাকাঘর (একতলা) ডুবে গেছে। কোথাও আশ্রয় নেওয়ার মতো অবস্থান নেই। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ”

এদিকে টানা বৃষ্টিতে ফেনী পৌর শহরের বেশিরভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এসব সড়কে বসবাসকারী বাসিন্দা ও পথচারীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।

শহর ঘুরে দেখা গেছে, ফেনী শহরের মিজান রোড, একাডেমি রোড, শাহীন একাডেমি, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক, রামপুর, তাকিয়া রোড, আবু বক্কর সড়ক, ফেনী বড় বাজারের বিভিন্ন গলি, বারাহীপুর এলাকা, মহিপাল চৌধুরী বাড়ী সড়ক, পাঠান বাড়ী রোডসহ বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে পানি প্রবেশ করেসিএনজিচালিত অটোরিকশার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারী ও বাসিন্দারা।

ফেনী পৌরসভার সচিব সৈয়দ মো. আবুজর গিফরী বলেন, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে সড়ক থেকে পানি নামতে সময় লাগছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন ড্রেন পরিষ্কারে কাজ করছে। পানি নেমে যাওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

জেলা প্রশাসক মোসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়