মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ২৩ আগস্ট ২০২৪

বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্কহীন ফেনী, পানিবন্দি ৪ লাখ মানুষ

বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্কহীন ফেনী, পানিবন্দি ৪ লাখ মানুষ

ভারত থেকে আসা প্রবল ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ফেনী জেলায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। জেলার ছয়টির মধ্যে সদরসহ চারটি উপজেলার মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

দুইদিন ধরে ফেনীর বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সার্ভিস। ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার বন্যা কবলিত লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক জায়গায় মানুষ আটকা পড়ে আছেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশের অনেক জায়গাই তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানিও দেখা গেছে। এতে ওই মহাসড়ক ধরে যানচলাচল প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, “জেলা সদর ও তিনটি উপজেলা বন্যাকবলিত। এ ছাড়া দাগনভূইয়া ও সোনাগাজী উপজেলা আংশিকভাবে বন্যাকবলিত। “এসব এলাকার চার লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। সেখানে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।”

বন্যাকবলিত তিনটিসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে বিশুদ্ধ পানি ও রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো হতাহত বা নিখোঁজের সংবাদ তারা পাননি।

বন্যা উপদ্রুত উপজেলাগুলোতে পানি স্থির রয়েছে। বুধবার যে হারে পানি বাড়ছিল বৃহস্পতিবার তা অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে বলে প্রশাসনের ভাষ্য। তবে জেলা সদরের দিকে পানির উচ্চতা বাড়ছিল।

ফেনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়াইপুরের বাসিন্দা জহিরুল হক জানান, তার এলাকার রাস্তাঘাটে তিন ফুট উচ্চতায় পানি ওঠেছে। বুধবার বেলা ২টা থেকে এখনও পর্যন্ত শহরের বেশিরভাগ এলাকাতে বিদ্যুৎ নেই।

তিনি বলেন, “শহরের নিচু এলাকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে। তবে পাকা ভবনের লোকজন ছাদে বা দোতলায় আশ্রয় নিয়েছেন।”

বেশি উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার কাজ চললেও সেখানে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১২ ঘণ্টা ধরে ফেনীতে বৃষ্টিপাত না হলেও সদরে পানির উচ্চতা বাড়ছে। তবে শহরের হাসপাতাল ও প্রশাসনিক এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে।


ফেনীর কয়েকটি এলাকায় যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি

এদিকে ফেনীর কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যেদিকে চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ; পানিতে ডুবে আছে। যাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে তাদের ঠিকানা হয়েছে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, স্থানীয় মসজিদ ও মন্দিরে।

বিভিন্ন স্কুলের ছোট ছোট কামড়ায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা খাবার পানি, শুকনো খাবারের সমস্যায় রয়েছেন বলেও জানান।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা রাজ্যের অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে।

এর আগে প্রবল বৃষ্টিতে ২ অগাস্ট পরশুরামের মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর গত চার দিনের ভারী বৃষ্টিতে মুহুরী নদীর বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে তিন উপজেলার ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি দল। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

ফেনী সদরের ছনুয়া ইউনিয়নের ভাঙা তাকিয়া, কালিদহ ইউনিয়নের মাইজবাড়িয়াসহ সংলগ্ন এলাকায় দিনভর উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম থেকে আসা একটি দল।

বেলা সাড়ে ৩টায় ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তারা ৫৫ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়েছেন।

ফেনীর বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধারে চাঁদপু্রের শিক্ষার্থীরা নিয়ে এল ১৭ স্পিডবোট

ফেনীর বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধার করতে চাঁদপুর থেকে শিক্ষার্থীরা ১৭টি স্পিডবোট নিয়ে এসেছেন। বুধবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত তারা ১৭টি স্পিডবোট ডাকাতিয়া নদী থেকে তুলে ট্রাকে করে নিয়ে এসেছেন। সঙ্গে অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আছেন।

চাঁদপুরের বাসিন্দা ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর হোসেন বলেন, “আমরা বেশ কিছু শিক্ষার্থী ফেনীতে বন্যায় আটকেপড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে চাঁদপুর থেকে এ পর্যন্ত ১৭টি স্পিডবোট ভাড়া করেছি। সবকটি ট্রাকে তুলে ফেনীতে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রতিটি স্পিডবোটকে প্রতিদিন ভাড়া হিসেবে দিতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা করে। আমাদের এ কাজে সহায়তা করছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।”

চাঁদপুর বড়স্টেশন খেয়াঘাটের স্পিডবোটের চালক নাজমুল মল্লিক বলেন, “শিক্ষার্থীসহ অন্য অনেকেই বন্যায় আটকেপড়াদের উদ্ধারে স্পিডবোট ভাড়া নিচ্ছেন। প্রতিটি বোটের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা পড়ছে।

এ ছাড়া চাঁদপুর থেকে ট্রাকে করে আনা-নেওয়া, প্রতিদিন উদ্ধারকাজ চালানো ও চালকের খরচ ভাড়া নেওয়া ব্যক্তিরাই বহন করছেন বলেও জানান নাজমুল মল্লিক।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়