শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪ আশ্বিন ১৪৩১

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু: শামীমকে দফায় দফায় মারধরের পর দেওয়া হয় পুলিশে

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু: শামীমকে দফায় দফায় মারধরের পর দেওয়া হয় পুলিশে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে কারও জন্য অপেক্ষায় ছিলেন শামীম; হঠাৎ পেছন থেকে তিনজন এসে তাকে জাপটে ধরে মারধর শুরু করেন। এরপর আরও চার দফায় বেধড়ক মারধরের পর তাকে দেওয়া হয় পুলিশে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ছাত্রকে মারধরের ঘটনার সূত্রপাত বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হলেও রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় প্রক্টরিয়াল বডি। এরপর পুলিশ শামীমকে হাসপাতালে নিলে রাত সোয়া ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে মোল্লা শামীম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাতেই থাকতেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৫ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে তাকে পেটানো হয়। তার বিরুদ্ধে জমি দখলে সহায়তা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।

শামীমের মৃত্যুর পর রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তারা।

ঘটনার বর্ণনায় দুজন শিক্ষার্থী বলেন, বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে মহাসড়কের পাশে এক স্বজনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন ছিলেন শামীম। তাকে দেখতে পেয়ে তিন শিক্ষার্থী ধরতে যান। একজন তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরে ফেলেন। সেখানে এক দফা তাকে মারধর করা হয়।

এরপর প্রান্তিক গেইটের ভেতরে যেখানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে কাপড় বিক্রি হয়, সেখানে নিয়ে শামীমকে আরেক দফা মারধর করা হয়। এরপর তাকে জয় বাংলা গেইটে নিয়ে আরেকবার মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে তুলে দেওয়া হয়।

তারা শামীমকে প্রক্টর অফিসের পাশের একটি কক্ষে রাখেন। সেখানেও তাকে আরও দুই দফা মারধর করা হয়।

দুই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, খবর শুনে পুলিশ আগেই এসেছিল, তবে প্রক্টর অফিসের ওই কক্ষে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শামীমকে পুলিশে হস্তান্তর করা হলে তাকে ‘হাঁটিয়ে নিয়ে’ গাড়িতে তোলে পুলিশ।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রশিদুল আলমও বলছেন, শামীম ‘হেঁটে-হেঁটেই’ পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। কিন্তু এরপর তার মৃত্যুর বিষয়টি 'অস্বাভাবিক' হিসেবে দেখছেন প্রক্টর।

তবে পুলিশ বলছে, তাকে উদ্ধারের পরপরই তারা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু চিকিৎসক শামীমকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রক্টর রশিদুল আলম বলেন, “১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষার্থীরা আটকের পর মারধর করে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়। আমরা আশুলিয়া থানায় অবহিত করলে পুলিশের একটি টিম আসে।

“তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পুলিশে হস্তান্তরের সময়ও মনে হয়নি তিনি ‘আশংকাজনক’।

তবে ঢাকা জেলা পুলিশের এসপি আহম্মদ মুইদ বলেন, “আমরা তাকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। হাসপাতালে পাঠানোর পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”

আশুলিয়া থানা পুলিশ শামীমকে পাঠিয়েছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে।

এ হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিমুজ্জামান সুজন বলেন, “রাত সোয়া ৯টার দিকে শামীমকে নিয়ে আসার পর আমরা পরীক্ষা করে তাকে মৃত অবস্থায় পাই। দেখে মনে হয়েছে হাসপাতালে আনার কিছু আগেই ওনার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়