রোববার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৭ আশ্বিন ১৪৩১

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ০৯:৫৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপনার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন আছে, কমিশন কোথা থেকে করবেন: ফরহাদ মজহার

আপনার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন আছে, কমিশন কোথা থেকে করবেন: ফরহাদ মজহার

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দেওয়ার কথা তুলে ধরে কবি ও তাত্ত্বিক ফরহাদ মজহার সংস্কার কমিশন করার আগে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘বৈধতা’র প্রসঙ্গটি সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন।

তরুণদের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছা দলগুলো মেটাতে না পারলে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আবশ্যকতার কথাও বলেন তিনি।

শনিবার ঢাকায় ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের মিলনায়তনে ‘শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্র সংস্কারে করণীয়’ শিরোনামে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তরুদের রাজনৈতিক দল করার বিষয়ে তিনি বলেন, “তরুণদের দল করবার অধিকার আছে। এবং বিএনপি তাদের যে তৃষ্ণা তাদের যে আকাঙ্খা তাদের যে লক্ষ্য এটা মটাতে পারেনি। বিএনপি বলুন বা জামায়াতই বলুন তাদের এ ভরসা দিতে পারছে না।”

তিনি বলেন, বিএনপি যদি বিচক্ষণ ভূমিকা পালন করতে পারে এবং তরুণদের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছা মেটাতে পারে, তাহলে তরুণদের আলাদা রাজনৈতিক দল করা লাগবে না। আর তা না পারলে ‘তরুণদের অবশ্যই একটা নতুন রাজনৈতিক দল লাগবে’।

সংস্কার কমিশন গঠন প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, “উনি (প্রধান উপদেষ্টা) ধরে ধরে উনার পছন্দের লোক বিভিন্ন কমিশনে বসিয়ে দিয়েছেন। কমিশন করার অধিকার আপনাকে কে দিল? আপনার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন আছে, কমিশন কোথা থেকে করবেন? আগে ওটাকে সল্ভ করেন।”

প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। পরে চলতি মাসে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে সরকার।

কমিশন গঠন নিয়ে সমালোচনা করলেও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মহজার অন্তর্বর্তী সরকারকে জোর সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছেন। নাগরিক সমাজের কিছু শর্তের কথা তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা তো (সরকারকে) সমর্থন করতে রাজিই আছি। আমরা এই সরকারের পক্ষে। আমরা শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার ফিরে আসুক, তা চাই না। যে কোনো মূল্যেই হোক আমরা তাদের প্রতিহত করব। প্রতিহত করছি বলেই এখনও আপনি টিকে আছেন।

“যদি আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা না করতাম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে; তাহলে এই দুর্বল, এতই দুর্বল সরকার এতদিন টিকে থাকার কথা না। যেহেতু আমরা মনে করি, এই গণঅভ্যুত্থান রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য, আমরা সেটা পালন করছি।”

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলনের দুর্বলতা তুলে ধরে ফরহাদ মহজার বলেন, “আপনারা গণঅভুত্থান করতে পারতেন না খালেদা জিয়ার সাথে থাকলে।

“আমি শুরু থেকে বিএনপিকে বলেছিলাম, নির্বাচন করে ফ্যাসিস্ট শক্তির, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের বৈধতা দেওয়া যাবে না।”

নির্বাচন সমাধান নয় মন্তব্য করে এই রাষ্ট্রচিন্তক বলেন, “এই গণঅভ্যুত্থানটা বিএনপির নেতৃত্বে হওয়ার কথা ছিল, বিএনপি সেটা পারে নাই। বিএনপি নির্বাচন চেয়েছে। নির্বাচন আমাদের দেশের জন্য সমাধান নয়। নির্বাচন চাইলে প্রশ্ন আসবে আপনি কি গণপরিষদ নির্বাচন চান নাকি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখে খালি নির্বাচন চান?

“বিএনপিকে বিনয়ের সাথে বলেছি, আপনাদের এই নীতি, নির্বাচনের এই নীতিটা হচ্ছে- ফ্যাসিস্ট সিস্টেমটা রেখে দুয়েকটা সংস্কার করে আপনারা আওয়ামী লীগের মত ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছেন। এটি কিন্তু তরুণরা গ্রহণ করবে না।”

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফরহাদ মজহার বলেন, “রাষ্ট্র চিন্তার জায়গায় যদি দেখেন ব্র্যাকের, নর্থ সাউথের অবদান, আমরা কিন্তু তা দেখি না। আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাই না, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রিয়েল প্রবলেমের আলোচনা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হয়েছে।

“এমবিএ পাশ করে কেবল বড় বড় করপোরেশনে কাজ করবেন, এটা রাষ্ট্রের কাজ না। যদি টেকনোলজির ট্রান্সফার না করতে পারেন, যদি জ্ঞানের রাজ্যে ফ্রন্ট লাইনে না থাকতে পারেন, তাহলে কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো যৌক্তিকতা নাই টিকিয়ে রাখার।”

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জমান রিপন বলেন, “সংস্কার, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দরকার রাজনৈতিক সরকারের। চাপিয়ে দেওয়া সংস্কার মেনে নেওয়া হবে না। এটা পাঁচ-ছয় বা চার বছরের সরকার না। ইন্টেরিম গভরমেন্ট ইজ ইন্টেরিম।”

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের যে কাজ, সেটুকু করার ক্ষেত্রে তাদের সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু এটা অনেক জন-আকাঙ্ক্ষার সরকার, ফলে সমালোচনা নয়, সমর্থন দিতে হবে এ সরকারকে।”

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিগত আচরণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা এটা দোকান মনে করেন; ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মনে করেন, টাকা কামাইয়ের কারখানা মনে করেন।”

ব্যবসায়ী নাফিজ সরাফাত এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের উদাহরণ টেনে রোবায়েত বলেন, “টাকা বানানো এবং টাকা পাচারের একটা মাধ্যম হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।”

কঠোরভাবে বেসরকারি মালিকদের ‘ধরতে হবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের লোকেরা কোটি কোটি টাকা নেন। আবার সরকারের কাছে যান নানা সুযোগ চাইতে। আইনিভাবে কোনো টাকা মালিকরা এবং ট্রাস্টিরা নিতে পারেন না।

মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জল হোসেনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের অতিথি কক্ষে পিটিয়ে হত্যার জন্য শেখ হাসিনার ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’র সংস্কৃতিকে দায়ী করে অধ্যাপক রোবায়েত বলেন, “র‍্যাব, রাষ্ট্র যখন ক্রসফায়ারের বৈধতা দেয়, এটাও তেমন। এটা ‘সোশ্যাল ক্রসফায়ার’।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের সমর্থক, ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের গড়পড়তাভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে শিক্ষক-ছাত্রদের লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির কারণে মেধায় শিক্ষক নিয়োগ হয় নাই। আরও বক্তব্য দেন ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ এর মুখপাত্র ও প্রধান সমন্বয়ক ফারুক আহমাদ আরিফ।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়