শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪ , ৩ কার্তিক ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

মিয়ানমারে তুমুল বোমা বিস্ফোরণ, টেকনাফের বাড়িতে বাড়িতে ফাটল

মিয়ানমারে তুমুল বোমা বিস্ফোরণ, টেকনাফের বাড়িতে বাড়িতে ফাটল

মিয়ানমারে বিকট বোমা বর্ষণে কাঁপছে টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকা। প্রবল কম্পনের ফলে টেকনাফের একটি গ্রামের অন্তত ২৫টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা।

ওপারের বিস্ফোরণে সাবরাং ইউনিয়নসহ কয়েকটি গ্রামে লোকজনের ঘরবাড়িতে ফাটল ধরেছে জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “আতঙ্কে সীমান্তবতী গ্রামের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর ঘিরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই সম্প্রতি আরও তীব্র হয়েছে বলে জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।

টানা তিন দিন ধরে সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে এপারে। মিয়ানমারের আকাশে যুদ্ধবিমান চক্কর দিচ্ছে।

মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক আছে।”

ইউএনও বলেন, “বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।”

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ বিরতির পর সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। ওই সময় দেখা গেছে আকাশে যুদ্ধ বিমানের চক্করও। সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা না গেলেও দিবাগত রাত ১টা থেকে আবারও শুরু হয় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। যা মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

এ সময়ও মিয়ানমারের আকাশে যুদ্ধবিমানের চক্কর দেখা গেছে। বিমানের চক্করের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসে বিকট শব্দ। বুধবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তও একই ধরনের বিকট শব্দ ও যুদ্ধবিমানের চক্কর দেখা গেছে।

এতে কাঁপছে টেকনাফের সীমান্ত এলাকা। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের আছারবুনিয়া গ্রামের অন্তত ২৫টি বাড়িতে ফাটলের তথ্য পাওয়া গেছে।

বুধবার সকালে ওই ইউনিয়নের আছারবুনিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক। তখনো ওপারের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ঘরের বাইরে এসে গাছের নিচে, দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রাখাইন যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন মানুষজন।

আছারবুনিয়া গ্রামের মোহাম্মদ হানিফ (৪৫) বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। তিনি বলছিলেন, “সারাদিন ব্যাংকের কাজে ব্যস্ত থাকি। রাতে ঘরে এসে ঘুমানো যায় না। ওপারের বিকট শব্দে ঘরবাড়ি কাঁপে। এখানকার অনেক ঘরে ফাটল ধরেছে। দেয়াল ধসের আশঙ্কায় অনেক মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়-স্বজনের বাসাবাড়িতে চলে যাচ্ছেন। আমার বাড়ির পাশে এক গ্রামেই পাঁচটি বাড়িতে ফাটল ধরেছে।”

একই গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা বেগম (৪৬) বলেন, চার মাসের বেশি সময় ধরে ওপারের বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আসছেন তারা। মাঝেমধ্যে ওপারের গুলি এসে এপারের ঘরবাড়িতে পড়ছে। বিকট শব্দে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফাটলে দেয়াল ধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কায় ঘরের বাইরে রাত কাটাচ্ছেন তারা। ঘর মেরামতের সামর্থ্যও তাদের নেই।

সাবরাং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরীফ বলেন, মিয়ানমারের মংডু শহরের পশ্চিম পাশে নাফ নদী। এর প্রস্ত তিন কিলোমিটার। এই নদীর পাড়েই আছারবুনিয়া গ্রাম। বিকট বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে গ্রামটি।

শরীফ বলেন, “এরই মধ্যে গ্রামটির অন্তত ২০টি মাটির দেয়ালের বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। মর্টার শেলের বিকট শব্দে ঘুমানো যায় না। রাত হলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বেড়ে যায়। হয়তবা নাফ নদীর কারণে বোমা বা মর্টার শেল এপারে এসে না পড়লেও শাহ পরীর দ্বীপ, টেকনাফ স্থলবন্দর ও দমদমিয়া এলাকায় কয়েকটি গুলি এসে পড়েছে স্থানীয় লোকজনের বসতবাড়ি ও অফিসে।”

ইউপি সদস্য শরীফ বলেন, “মঙ্গলবার রাতে বিকট বিস্ফোরণের কাঁপুনিতে মানুষের বসবাড়ির দেয়াল ফেটে গেছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

আছারবুনিয়া সমাজ কমিটির সভাপতি রফিক উদ্দিন বলেন, “মঙ্গলবার রাতে বোমার শব্দে কাঁপুনিতে এলাকার ২০-২৫টি সেমিপাকা টিনশেড ও মাটির দেয়ালে বড় বড় ফাটল ধরেছে। এখন এসব ঘরে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়