শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১২ পৌষ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ১০:০২, ২ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১০:০৪, ২ নভেম্বর ২০২৪

ট্রাফিক পুলিশকে আর হাত দেখাতে হবে না, ঢাকার ২৯ ইন্টারসেকশনে বসছে নতুন সিগন্যাল বাতি

ট্রাফিক পুলিশকে আর হাত দেখাতে হবে না, ঢাকার ২৯ ইন্টারসেকশনে বসছে নতুন সিগন্যাল বাতি

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০২-২০০৫ সালে ১৩ কোটি ৬০ লাখ এবং ২০১০-২০১৮ সালে ‘ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় ১১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৬৮টি ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়েছিল ঢাকায়। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাতিগুলোর প্রায় সবই নষ্ট। শুধু গুলশান-২ এ ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ট্রাফিক সিগন্যাল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। দীর্ঘক্ষণ হাতের ইশারা ও বাঁশি দিয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল সামলান তারা। এতে সিগন্যাল অমান্যের প্রতিযোগিতা দেখা যায় চালকদের মধ্যে।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খোন্দকার নজমুল হাসান গত ২৭ আগস্ট অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই ঢাকায় ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। সভা-সেমিনার করছেন পরিবহন মালিক, শ্রমিক, চালকদের সঙ্গে। ঢাকা শহরে দেশীয় প্রযুক্তির সিগন্যাল বাতি ও ট্রাফিকের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন তিনি। এরপর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন।

নজমুল হাসান বলেন, "ঢাকায় বর্তমানে শুধু একটি ইন্টারসেকশনে সিগন্যাল বাতি আছে। বাকি ১৫১টি ইন্টারসেকশনে বাতি নেই। দীর্ঘদিন ধরে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা হাত উঁচিয়ে গাড়ি থামাচ্ছেন। এটা একটি অমানবিক এবং কায়িক পরিশ্রমের কাজ। এখান থেকে উত্তরণে আমরা বেশ কয়েক দফা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিটিং করেছি। প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ও এটা নিয়ে কনসার্ন। এজন্য একটি পাইলট প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে।

আগে যেসব ট্রাফিক সিগন্যাল লাগানো হয়েছিল সবগুলো বিদেশি প্রযুক্তির। এগুলোর বিভিন্ন পার্টস পাওয়া যায় না, আবার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে আর কার্যকরও থাকে না।

এখানে বুয়েট, দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), বিআরটিএসহ বিভিন্ন সংস্থা মিলে ট্রাফিক সিগন্যাল যেন দেশীয় প্রযুক্তির হয় এজন্য কাজ করছে। কারণ আগে যেসব ট্রাফিক সিগন্যাল লাগানো হয়েছিল সবগুলো বিদেশি প্রযুক্তির। এগুলোর বিভিন্ন পার্টস পাওয়া যায় না, আবার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে আর কার্যকরও থাকে না।"

তিনি জানান, পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে হাইকোর্টের ইন্টারসেকশন থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ২৯টি ইন্টারসেকশনে দেশীয় প্রযুক্তির সিগন্যাল বাতি বসানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

নতুন সিগন্যাল বাতি কোথায় কোথায় বসবে জানতে চাইলে নজমুল হাসান বলেন, " প্রাথমিকভাবে দুই সিটি করপোরেশনের চারটি ক্রসিংয়ে সিগন্যালে বাতি লাগানোর কাজ শুরুর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলামোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সোনারগাঁও ও ফার্মগেট ক্রসিংয়ে সিগন্যালে বাতি লাগানো হবে। সিটি করপোরেশন এক্ষেত্রে আর্থিক ব্যয় বহন করছে। এতে সাপোর্ট দেবেন বুয়েটের অভিজ্ঞরা। সমন্বয় করবে ডিটিসিএ। যেহেতু সড়কে কাজ করে ট্রাফিক পুলিশ, তাই দেশীয় সিগন্যালে বাতির নিয়ন্ত্রণ থাকবে।"

পরবর্তীতে শিক্ষা ভবন মোড়, কদম ফোয়ারা ও মৎস্য ভবন মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড় হয়ে মিন্টো রোডের মোড়ে বসবে। পরে বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর হয়ে আবদুল্লাহপুর মোড় পর্যন্ত বসানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এই ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ সংকেত বাতি (লাল, সবুজ ও হলুদ) জ্বলা-নেভার বিষয় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পরে ধাপে ধাপে এ পদ্ধতিকে অটোমেশনের দিকে উন্নীত হবে।

ট্রাফিক পুলিশকে আর হাত দেখাতে হবে না। সিগন্যালের মাধ্যমে ট্রাফিক বাতি দেখানো হবে। কোনো সিগন্যালে বেশি সময় লাগলে সেটিও জানা যাবে। পথচারী পারাপারের জন্যও আলাদা সিগন্যাল থাকবে।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের পর ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ১৬২টির মতো ট্রাফিক বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এগুলো বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এখন সরকারিভাবে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ট্রাফিক বক্সগুলো নির্মাণ করা হবে।  ট্রাফিক বক্সগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হবে যেন মানুষের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে। 

নাজমুল মনে করেন, ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মানসম্পন্ন চালক ও মালিকের অভাব। মালিক কন্ট্রাক্টে গাড়ি দিচ্ছেন। চালক টার্গেট করে যেন ১৫ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারেন, এই ভেবে যে, পাঁচ হাজার টাকা মালিককে দেবেন আর ১০ হাজার টাকা তার লাভ। এই লোভের বশবর্তী হয়ে বিশ্রাম না নিয়ে ইনকামের প্রতিযোগিতায় নেমে যান চালক। ইনকামের লোভে বেশি ট্রিপের জন্য দুর্ঘটনায় পড়ছে। এক্ষেত্রে মালিকের যেমন দোষ তেমন চালকদেরও দোষ রয়েছে। এছাড়া অনেক চালক মাদকের সঙ্গে জড়িত। তাদের সচেতন করতে পুলিশ কাজ করছে।

গত ২১ অক্টোবর থেকে ট্রাফিক পক্ষ শুরু হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে তাদের শিক্ষার্থীদের কিছু সময়ের জন্য পুলিশের সঙ্গে ট্রাফিকের কাজ করলে সচেতনতা তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করায় মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। বর্তমানে ট্রাফিক পক্ষ চলাকালীন এক হাজার শিক্ষার্থী সড়কে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। সড়কে যারা ট্রাফিকের কাজ করছে সব শিক্ষার্থীর জন্য সনদের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে কর্মজীবনে সেই শিক্ষার্থী মূল্যায়িত হয়।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়