বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১০:০২, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন: জাতির উদ্দেশে ড. ইউনূস

অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন: জাতির উদ্দেশে ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও (রূপরেখা) পাওয়া যাবে। প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারকাজ শেষ করেই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তবে নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না। অবশ্য সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে গতকাল রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথাগুলো বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ২৪।

নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে, সেটা নির্ভর করবে, কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।’


ভাষণের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের লাখ লাখ শহীদ এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র, শ্রমিক, জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদকে সশ্রদ্ধ সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে স্মরণ করেন ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাঁরা আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন এবং যাঁরা ৯ দফা ও ১ দফা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, যাঁরা দেশকে এক হিংস্র স্বৈরাচারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।

প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করার কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এক কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট সরকারপ্রধান পালিয়ে গেলে দেশ সরকারশূন্য হয় সাময়িকভাবে। পুলিশ প্রশাসনও এ সময় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে উদ্বেগজনক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে সবাইকে মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্টে বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক-জনতার শহীদি মৃত্যু হয়। এই বিপ্লবে আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ৯৩১ জন। আহত ব্যক্তিদের জন্য ঢাকার ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিনই তালিকায় আরও নতুন নতুন শহীদের তথ্য যোগ হচ্ছে, যাঁরা স্বৈরাচারের আক্রোশের শিকার হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।’

শুধু জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করা হবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনপ্রধান তাঁকে জানিয়েছেন, অক্টোবর পর্যন্ত তাঁরা ১ হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাঁদের ধারণা, এই সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে। অনেকেই কমিশনের কাছে গুমের অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা তাঁরা আবার আক্রান্ত হতে পারেন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে কমিশনকে অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কারও সাধ্য নেই আপনাদের গায়ে আবার হাত দেয়।’

কেবল দেশে নয়, গুম-খুন ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের আন্তর্জাতিক আদালতেও বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের সঙ্গে তাঁর ইতিমধ্যে কথা হয়েছে।

প্রতি শহীদ পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে
গণ-অভ্যুত্থানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহত সব শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। প্রতিটি শহীদ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা বুলেটের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার জন্য নেপাল থেকে কর্নিয়া আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁদের প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের কোনো শহীদ এবং আহত ছাত্র-শ্রমিক চিকিৎসাসেবা ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা থেকে বাদ যাবে না। গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ বেশ পাকাপোক্তভাবে তাদের কাজ শুরু করেছে।

পতিত স্বৈরাচার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাধ্য হয়ে তাঁদের অনেকেই গণহত্যায় অংশ নিয়েছেন। খুবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাঁরা জনরোষের শিকার হয়েছেন। এতে তাঁদের মনোবল অনেক কমে যায়। পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে এনে আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে অনেক দৃশ্যমান উন্নতিও হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও কিছু নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতিতে সহায়তা করেছে।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, বাংলাদেশ তখন সম্পূর্ণ অরক্ষিত একটা দেশ। এ সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে তাঁরা সহিংসতারও শিকার হয়েছেন। কিন্তু এটা নিয়ে যেসব প্রচার-প্রচারণা হয়েছে, তা ছিল সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত। অল্প যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক। কিন্তু এসব ঘটনাকে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন করে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় আমরা দৃঢ়ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ই নয়, দেশের কোনো মানুষই যাতে কোনোরকম সহিংসতার শিকার না হয়, সে জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।

বন্যা-পরবর্তী সময়ে বাজারে শাকসবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারি কিছু পণ্য স্বল্প মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি নিম্ন আয়ের ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে ৫৭ লাখকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। বন্যার ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকারের কোনো লুকোছাপা নেই।

ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর। তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁদের মতামত নিচ্ছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এসব মতামত অনেকাংশে প্রতিফলিত হচ্ছে। চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিটি মতামত সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ে ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করতে পারবে। তাদের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় বসবেন। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে।

সরকার নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। এর পর থেকে নির্বাচন আয়োজন করার সমস্ত দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ আরও কিছু কাজ শুরু করে দিতে পারবে, যা একটি অবাধ নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে যাতে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সে লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে।

নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য বিনা দ্বিধায় বলার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার অনুরোধ সংস্কারের কথাটাও একই সঙ্গে বলুন। সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যাবেন না। নির্বাচনের কথা বলার সঙ্গে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের কথাটিও বলুন। সংস্কার হলো জাতির দীর্ঘমেয়াদি জীবনী শক্তি। সংস্কার জাতিকে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সুযোগ দেবে। জাতিকে বঞ্চিত করবেন না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন আয়োজনে যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দলগুলো এবং দেশের সব মানুষের মতামত অপরিহার্য, সে কমিশন হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই সুপারিশমালার যে অংশ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তার ভিত্তিতে নির্বাচনী আইন সংশোধন করতে হবে। সমান্তরালভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি নিশ্চিত নই, সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ আমরা কতটুকু পাব। তবে আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা সুযোগ দিলে প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারকাজ শেষ করেই আমরা আপনাদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন আয়োজন করব। তত দিন পর্যন্ত আমি আপনাদের ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করব। আমরা চাইব, যেন এমন একটি নির্বাচনব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারি, যা যুগ যুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। এর ফলে সাংবাৎসরিক রাজনৈতিক সংকট থেকে আমাদের দেশ রক্ষা পাবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু আমি আপনাদের কাছে চেয়ে নিচ্ছি। নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপও পেয়ে যাবেন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করার ব্যাপারে ঐকমত্য গঠনের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হতে পারে। দেশবাসীর কাছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ক্রমাগতভাবে প্রশ্ন তুলতে থাকব, কী কী সংস্কার নির্বাচনের আগে করে নিতে চান। নির্বাচনের আয়োজন চলাকালীন কিছু সংস্কার হতে পারে। সংস্কারের জন্য নির্বাচনকে কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে।

নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা দুই দিন পর চলে যাব। কিন্তু আমাদের মাধ্যমে জাতির জন্য যে ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হলো, সে সুযোগটা যেন কোনোরকমেই হাতছাড়া করে না দিই, এটার ব্যাপারে দৃঢ় থাকার জন্য আমি দল–মত, নারী-পুরুষ, ধর্ম, তরুণ-বৃদ্ধ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষক নির্বিশেষে সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি, আপনারা আমার এই আবেদন গ্রহণ করবেন।’

তিন মাসে নিয়োগ, পদোন্নতি, অধ্যাদেশ বা আইন প্রণয়নসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সফলতার কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, ‘১০০ দিন আগে আর্থিক দিক থেকে আমরা যে লন্ডভন্ড অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, সেটা এখন অতীত ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ১০০ দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পতিত সরকার ও তার দোসররা প্রতিবছর দেশ থেকে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সম্প্রতি এই তথ্য দিয়েছে। পাচার হয়ে যাওয়া এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই সংকটের সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০ দেশের রাষ্ট্রদূতেরা দিল্লিতে থাকেন। সাত দেশের রাষ্ট্রদূতেরা ঢাকায় থাকেন। দিল্লি থেকে একসঙ্গে ২০ জন রাষ্ট্রদূতসহ মোট ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূত সমবেতভাবে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করার জন্য কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকায় আসছেন।

এ সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য, অকার্যকর করার জন্য বিশাল অর্থে বিশ্বব্যাপী এবং দেশের প্রতিটি স্থানে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এক মহাপরিকল্পনা প্রতি মুহূর্তে কার্যকর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের একটি বড় চেষ্টা হচ্ছে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। পতিত সরকারের নেতারা, যারা এ দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে নিয়ে গেছে, সে অর্থে বলীয়ান হয়ে তারা দেশে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের কিছুতেই সফল হতে দেবেন না। তারা সফল হওয়া মানে জাতির মৃত্যু। সাবধান থাকুন। তাদের সব হীন চেষ্টাকে আমাদের ঐক্যের মাধ্যমে নস্যাৎ করে দিন। যেভাবে নস্যাৎ করেছিলেন তাদের বন্দুকের গুলিকে। তাদের আয়নাঘরকে। প্রতি পায়ে তাদের অনাচারের শিকলকে। এ ব্যাপারে সবাই একমত থাকুন, ঐক্যবদ্ধ থাকুন।’

সর্বশেষ

জনপ্রিয়