বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ২১ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে ডিসেম্বরে

বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে ডিসেম্বরে

বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশন বা পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক আগামী ডিসেম্বরে প্রথমভাগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এই বৈঠক সামনে রেখে আজ  বুধবার (২০ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে। পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে ভারতের সাথে আলোচনার জন্য এজেন্ডা নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।   

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিসেম্বরের বৈঠকে প্রতিবেশী দুই দেশের রাজনৈতিক বিষয়, নিরাপত্তা ইস্যুসহ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকটি ৫ আগষ্ট পরবর্তী বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এবছরের ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। তারপর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারতে অবস্থান করছেন। এতে দুইদেশের সম্পর্কেও ছন্দপতন ঘটে। হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠতম মিত্র মোদি সরকারের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে এমন অভিযোগ করে আসছে দেশটি। পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের স্থাপনা নিরাপদ নয়– এমন অভিযোগে ভারতীয় দূতাবাস ভিসা দেওয়া সীমিত করেছে। বর্তমানে মেডিকেল ভিসা ও তৃতীয় দেশে ভ্রমণের ভিসা ছাড়া অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না দেশটি। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তা ঘাটতির কথা বলে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ভারতীয় ঠিকাদার ও অন্যান্য লোকজনও বাংলাদেশ ছেড়ে গেছে। অবশ্য কোনো কোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে সেসব লোকজন ফিরতে শুরু করেছে।

যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। আর গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকের বৈঠক হয়। যদিও ওই সময় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করলেও ভারতের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আগষ্টের মাঝামাঝি ভারতের ত্রিপুরায় ডম্বুর বাঁধ কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা ছাড়া খুলে দেওয়ার কারণে, বাংলাদেশ বন্যার কবলে পড়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে- এমন অভিযোগ তোলেন অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা। ভারতের রাজনীতিবিদরাও বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। দেশটির গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ধারাবাহিক অপপ্রচারও চলছে। 

এমন পরিস্থিতিতে উভয় দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের মধ্যে বৈঠক হচ্ছে ডিসেম্বরে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফরেন অফিস কনসালটেশন মিটিংয়ে প্রধানত দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে বেশি আলোচনা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি চলমান চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো (এমওইউ) আপডেট করা হয়। এছাড়া আগের বিভিন্ন মিটিংয়ের সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর বাইরে দুই দেশের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাবও থাকে।

তিনি বলেন, 'এবারের মিটিংয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু নতুন প্রস্তাব থাকবে। কয়েকটি মন্ত্রণালয় আলোচনার জন্য একাধিক নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবগুলো মিটিংয়ের এজেন্ডায় রাখা হবে কিনা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'

জানা গেছে, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ২০টির বেশি চুক্তি ও ৬৫টির বেশি এমওইউ রয়েছে। তবে চুক্তিগুলোর বিষয়ে প্রকাশ্য কোনো নথিপত্র নেই। বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের সাথে আলোচনায় বলেছেন, ভারতের সাথে চুক্তিগুলো পুনঃমূল্যায়ন করা হবে। পর্যালোচনার পর যেগুলো নতুন করে করা দরকার– সেগুলো নতুন করে করা হবে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে 'প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বা ফেরার আসামি ও বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি আছে ২০১৩ সাল থেকে। গত ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস বলেছেন, "জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।"

জানা গেছে, ভারতীয় এলওসি ঋণে বাংলাদেশে ১৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আর ৮টি প্রকল্প রয়েছে ডিপিপি পর্যায়ে। তবে ভারতীয় ঋণ ছাড়ের গতি কম। এসব নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব এসেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের পক্ষ থেকে।

এর বাইরে সীমান্তের নিরাপত্তা, পানি বন্টন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, রেল চলাচল, সব ধরনের ভিসা চালু করা, প্রকল্পের ঠিকাদারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, বন্দর ও নদী ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ বৈঠকের এজেন্ডা সাজাচ্ছে বলে জানা গেছে।   

সর্বশেষ

জনপ্রিয়