বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২১ নভেম্বর ২০২৪

রাজনৈতিক দলের বিচার ট্রাইব্যুনালে হচ্ছে না: আসিফ নজরুল 

রাজনৈতিক দলের বিচার ট্রাইব্যুনালে হচ্ছে না: আসিফ নজরুল 

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে রাজনৈতিক দলের বিচারের বিষয়টি যুক্ত হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালে দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রেখে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের প্রস্তাবনা তোলা হলেও ওই বিধানটি যুক্ত হয়নি। তবে সরকার চাইলে প্রচলিত আইনে বিদ্যমান দল বা সংগঠন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

বুধবার (২০ নভেম্বর) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’ অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। পরে সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) ১৯৬৩ সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই আইনের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল থেকে অনেক সমালোচনা ছিল। আমরা একটি নিরপেক্ষ বিচার করতে চাই বলে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছি।’

তিনি জানান, এই আইন সংশোধনের আগে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশি বিদেশি আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনের কাছে পাঠিয়েও মতামত নেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হলে এটি গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে উপদেষ্টা পরিষদে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে। তা হচ্ছে, আমরা যে সংশোধনীর খসড়া করেছিলাম—সেখানে সংগঠনকে শাস্তি দেওয়ার বিধান ছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছিল—ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন মনে করলে কোনও সংগঠনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বলা হয়েছে—আমরা এই বিচারকে অন্য কোনও বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চাই না। রাজনৈতিক দল বা কোনও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন এলে এই আইনকে অযথাই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না। আমরা ডিসেন্ট ও ফেয়ার ওয়েতে বিচারটা করতে চাই। এজন্য ওই প্রভিশনটা বাতিল করা হয়েছে।’

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠন তাদের অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হয় বা সমাজে দাবি ওঠে—এ বিষয়ে আমাদের অন্যান্য আইন হয়েছে। সেসব আইনে নিষিদ্ধ করার বিধান আছে। সন্ত্রাস দমন আইনে রয়েছে। নির্বাচনি আইন রয়েছে। ১৯৭৮ সালের রাজনৈতিক দল আইন রয়েছে। কাজেই এই আইনে এই বিধানটা নেই দেখে আমাদের সেই সুযোগ আর থাকলো না, সেটা নয়। এটা যুদ্ধাপরাধ বিচার আইনে থাকলো না। কিন্তু অন্যান্য প্রচলিত আইনে রয়েছে। সেটার বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে জনমত ও জনদাবি এলে তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পরে বিবেচনা করা হবে। এটা আইনের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয় নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই আইনে ক্রাইম অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি, জেনোসাইডের ডেফিনেশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন অনুমোদন দিয়েছি। রোম স্ট্যাটিউট অবলম্বন করে জেনোসাইড, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে সংশোধনীতে।’

তিনি বলেন, ‘এই আইনে অভিযুক্তদের প্রসিকিউশনে সমান সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ভিকটিম প্রটেকশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। ’

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনে শত শত বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। নতুন করে এটা করা হয়নি। আমাদের পেনাল কোডে বহু আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। আমরা মৃত্যুদণ্ড বিলোপ সম্পর্কিত যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন আছে—সেখানে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী নয়। আমাদের আইনগত সংস্কৃতির সঙ্গে এটা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামকেও এটা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি।’

আপিলের সুযোগও বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার বিচার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়