বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আগরতলা মিশনে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ করল বাংলাদেশ

আগরতলা মিশনে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা বন্ধ করল বাংলাদেশ

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানকার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল মঙ্গলবার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সহকারী হাইকমিশনের সব ধরনের ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু সংঘর্ষ সমিতিসহ কয়েকটি সংগঠনের সমর্থকেরা গত সোমবার সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল। এ সময় তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল দুপুরে তলব করেছে। এ সময় আগরতলার ঘটনায় বাংলাদেশ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর হাতে একটি প্রতিবাদপত্র তুলে দেয়।

আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশ। বদলি করা হয়েছে জ্যেষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তাকে। ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাতজনকে।

ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের পাশাপাশি কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই, গুয়াহাটি ও আগরতলায় উপহাইকমিশন/সহকারী হাইকমিশন রয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন ভিসাসহ নানা রকম কনস্যুলার সেবা দিয়ে থাকে। কনস্যুলার সেবার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি নাগরিকদের কারও প্রয়োজন হলে ভ্রমণের অনুমতি-সংক্রান্ত পাস দেওয়া, আইনি সহায়তা দেওয়া।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের নাগরিকদের জন্য ওই মিশন থেকে প্রতিদিন আড়াই শ-তিন শ ভিসা ইস্যু করা হতো।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, নিরাপত্তার কারণে আপাতত আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে কনস্যুলার সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে ওই মিশন থেকে বাংলাদেশের ভিসা সেবা বন্ধ থাকবে।

সোমবার আগরতলার বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা এবং মুম্বাইয়ের উপহাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের পর গতকালও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়, গতকাল উত্তর প্রদেশের আলীগড়, অযোধ্যা, বানদাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ত্রিপুরার আগরতলায় ‘সনাতনী যুব’ ব্যানারে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের আখাউড়া চেকপোস্টের দিকে এগোতে চাইলে তাঁদের বাধা দেয় ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা গতকাল দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ ফাঁড়ির সামনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেন। এতে নেতৃত্ব দেন দক্ষিণ কলকাতার কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় ও প্রদীপ প্রসাদ।

এদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) আজ বুধবার কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের কাছে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলকাতা থেকে বাংলাদেশের এক কূটনীতিক গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে জানান, বিক্ষোভটি যাতে বাংলাদেশ উপহাইকমিশন থেকে বেশ কিছুটা দূরে থামিয়ে দেওয়া হয়, সে বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এরই মধ্যে মিশনের আশপাশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। ভারতের অভিযোগ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলছে। এই পরিস্থিতিতে কয়েক দিন ধরে ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা ও বিক্ষোভের মধ্যে সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়। সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ বলে আসছে, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়