দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশন অভিমুখে মিছিলের ডাক আরএসএসের
সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ তুলে নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন অভিমুখে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ’-আরএসএস।
দুইশরও বেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার ওই কর্মসূচিতে অংশ নেবে বলে খবর দিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
এমন সময়ে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যেটির আগের দিন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রের ঢাকা সফরে থাকার কথা। সোমবার-৯ ডিসেম্বর তার ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেওয়ার সূচি রয়েছে।
দিল্লিতে হাই কমিশন অভিমুখে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয় শুক্রবার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা প্রতিবেদনে বলা হয়, আরএসএসের দিল্লি ইউনিটের গণমাধ্যম বিভাগের কো-ইনচার্জ রজনীশ জিন্দাল এদিন সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “দিল্লির সুশীল সমাজ’ ব্যানারে ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে।বাংলাদেশে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে গোটা ভারতের মানুষ ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ। হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংসতার প্রতিবাদে আমরা দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন অভিমুখে প্রতিবাদ মিছিল করব।”
বাংলাদেশ মিশনে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন রজনীশ।
তিনি বলেন, “হিন্দুদের ওপর চলমান সহিংসতা থামাতে আমরা ইউএন, ইউএনএইচআরসি, ডব্লিউএইচও, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এডিবিসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করে স্মারকলিপি দেব।”
প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি ঘিরে সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদেরও একটি স্মারকলিপি দেওয়ার কথাও বলেছেন রজনীশ।
বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্যদের ওপর সহিংতা, নিপীড়নের অভিযোগ এনে আরএসএস বলছে, বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীজনদের নজরে আনতে ও হস্তক্ষেপের জন্য তারা এই কর্মসূচি দিয়েছে।
বাংলাদেশে তুমুল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট ভারতে যান তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তার ভারতে অবস্থানেরই খবর পাওয়া গেছে।
ক্ষমতার পালাবদল ঘিরে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। মুসলিমদের মন্দির পাহারা দেওয়ার খবর ও ছবিও ক্ষমতার পালাবদলের পর প্রকাশ পেয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
সরকার পরিবর্তনের তিন মাস পর সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। চট্টগ্রামে একটি আদালতে হাজির করার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর সময় সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়। এরপর চিন্ময়ের মুক্তি আর আইনজীবী হত্যার ওই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
‘সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ’সহ আট দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসা চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় দাসকে জামিন না দেওয়ায় এক বিবৃতিতে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে ভারত। আর বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে ভারতের বক্তব্যকে ‘অযাচিত উদ্বেগ’বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত ২ ডিসেম্বর ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে প্রতিবাদ ও স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’নামে একটি সংগঠনের সদস্যরা সেখানে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ নিয়ে এখন উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্কে শীতল অবস্থা চলছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্র ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় আসার কথা। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্কে ‘গতিশীলতা’ আসবে বলে আশা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।