আইনজীবী দাঁড়াতে পারছে না, মানবাধিকারের সহায়তা চায় সনাতনী জোট
দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ‘আক্রমণের’ মধ্যে আদালতে ‘ন্যায় বিচারও’ চাওয়ার পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এনে দেশে-বিদেশের সব মানবাধিকার সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেছে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোট।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন চেয়ে শুনানির আবেদন করা আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষকে ‘শারীরিক হেনস্তা ও হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে সংগঠনটি।
বুধবার রাতে জোটের সন্ত মন্ডল ও প্রতিনিধিবৃন্দের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করা হয়।
এতে বলা হয়, আদালত কক্ষে আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষকে পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়।
জোটের নেতারা বলেন, “এমন অবস্থায় দেশের হিন্দুরা আছি যাদের মারবে কাটবে, জমি দখল ও সম্পদ-ব্যবসা লুটপাট করবে, ‘মিথ্যা মামলায়’ গ্রেপ্তার করবে, কিন্তু তার জন্য আদালতে ‘ন্যায় বিচারও’ চাওয়া যাবে না। আমাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীও দাঁড়াতে পারবে না।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে শুনানি করতে তিনটি আবেদন জমা দেন আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। তবে তার শুনানির আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
বরীন্দ্র ঘোষ মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের চেয়ারম্যানও।
সনাতনী জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, “যেহেতু আদালত দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে, তাই সংগঠনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানির নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনার জন্য ও আইনজীবীদের নামে হওয়া ‘মিথ্যা মামলায়’ লড়তে ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ এসেছিলেন। কিন্তু আজ আদালতে, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি কথা রাখেনি।
“রোববার বিকেলে আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি বলেছিলেন, ‘আলিফ হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে চট্টগ্রামের বাইরের আইনজীবী দাঁড়ালে বাধা দেওয়া হবে না।’ কিন্তু আজ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষকে শারিরিকভাবে হেনস্থা ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। বিচারকের সাথেও খারাপ আচরণ করা হয়েছে।”
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, “আসামির পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবীর কোনো ওকালতনামা নেই। যে মামলায় উনি পিটিশন দিয়েছেন, সেই মামলার উকিল শুভাশীষ শর্মার পক্ষে উনার লিখিত কোনো ওকালতনামা নেই। তাই আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।”
তবে রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, “চিন্ময় প্রভুকে এখানকার আইনজীবীরা কেউ রিপ্রেজেন্ট করতে পারছেন না। জজ সাহেব আমার আবেদন অ্যালাও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেসময় ১০০ জনের মত আইনজীবী একসাথে চিৎকার করতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, ‘উনি পারবেন না, উনি এখানে কেন আসছেন, উনার ওকালতানামা নেই’।
“আমি একজন সিনিয়র আইনজীবী। আমি নিজে স্বাক্ষর করে শুনানি করার আবেদন করেছি। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি এমন, তা বুঝতে পারিনি। এটা খুব দুঃখজনক পরিস্থিতি। পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন বলে আমি রক্ষা পেয়েছি।”
সনাতনী জাগরণ জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, ৩ ডিসেম্বরও চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোন আইনজীবী দাঁড়াতে পারেনি।
“কারণ সেদিন আদালত চত্বরে সমাবেশ করে জামায়াত বিএনপির আইনজীবীরা। সেই সমাবেশ থেকে এক আইনজীবী যারাই চিন্ময়ের পক্ষে দাড়াঁবে তাদের গণপিটুনি দেওয়ার ডাক দেন। যার কারণে সেদিন আইনজীবী না থাকায় আদালতে জামিন শুনানি হয়নি। আদালত পরবর্তী ২ জানুয়ারি ২০২৫ সালে শুনানির দিন ধার্য করে।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ। মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ দেশের একাধিক এলাকায় বড় বড় সমাবেশও করেন।
গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা একটি মামলায়। চট্টগ্রামে সনাতনী জোটের একটি সমাবেশে জাতীয় পতাকার ওপরে হিন্দুদের গেরুয়া পতাকা উড়ানোর ঘটনায় এই মামলা করা হয়েছিল।
২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে চিন্ময়ের জামিন আবেদন নাকচ হলে তার সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে সংঘাতে নিহত হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।
এই ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি তাদের আইনজীবীদেরকে চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াতে নিষেধ করেছে। আর চিন্ময়ের পক্ষে যে আইনজীবীরা আইনি লড়াই করতে চেয়েছিলেন তাদের ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সনাতনী জোট।
বিবৃতিতে বলা হয়, “চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময় প্রভুর আইনজীবী রিগ্যান আচার্যসহ সাতজনের চেম্বার ভাঙচুর ও তাদের উপর হামলা করা হয়।”
তবে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি কোনো আইনজীবীকে বাধা দেওয়া বা কারও ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।