অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে: বিআইজিডির জরিপ
অন্তর্বর্তী সরকারের নানা কাজের প্রচেষ্টা কেমন, তাতে ১০০ নম্বরের মধ্যে কত দেবেন—এমন প্রশ্নে ৪০ শতাংশ মানুষ সরকারকে ৮১ থেকে ১০০ নম্বর দিয়েছেন। গত আগস্টে সরকারকে ৮১ থেকে ১০০ নম্বর দিয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ মানুষ। সেই হিসাব দেখলে বোঝা যায়, সরকারের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে আস্থাশীল মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় ৮ শতাংশ কমেছে।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভের’ দ্বিতীয় ধাপের জরিপের ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে (পিআইবি) এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
জরিপে প্রশ্ন করা হয়, গত এক মাসের রাজনৈতিক অবস্থা চিন্তা করে আপনার কী মনে হয়, বাংলাদেশ ঠিক পথে নাকি ভুল পথে যাচ্ছে? উত্তরে ৫৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে। ৩৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। তবে গত আগস্টে বিআইজিডির জরিপে ৭১ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে। ভুল পথে যাচ্ছে বলেছিলেন ১২ শতাংশ।
একইভাবে গত এক মাসের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় দেশ ঠিক পথে নাকি ভুল পথে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে৷ ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৫২ শতাংশ মানুষ৷ পুরুষদের ৪৩ শতাংশ আর নারীদের ৩৯ শতাংশ মনে করেন, দেশ অর্থনৈতিকভাবে ঠিক পথে যাচ্ছে। গত আগস্টে এ ক্ষেত্রে বিআইজিডির জরিপে ৬০ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে, ভুল পথে যাচ্ছে বলেছিলেন ২৭ শতাংশ।
রাজনীতি ও অর্থনীতি মিলিয়ে আশাবাদী ৩৭ শতাংশ মানুষ আর নিরাশাবাদী ২৯ শতাংশ। আগের জরিপে আশাবাদী ছিলেন ৬৮ শতাংশ আর নিরাশাবাদী ১৩ শতাংশ।
অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার দেশ ভালো পরিচালনা করবে কি না, এমন প্রশ্নে ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। দ্বিমত প্রকাশ করেছেন ১৫ শতাংশ।
আপনার মতে এই মুহূর্তে দেশের প্রধান সমস্যা কী—জরিপে এই প্রশ্নে ৬৭ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যার (দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়িক মন্দা) কথা বলেছেন৷ ৯ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতার কথা বলেছেন। আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলেছেন ৪ শতাংশ মানুষ। ৩ শতাংশ গণতন্ত্রের অভাব আর ২ শতাংশ নিরাপত্তার অভাবের কথা বলেছেন। সমস্যা নেই বলেছেন ৫ শতাংশ মানুষ।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে পরিণত হওয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৭৫ শতাংশ মানুষ, সমর্থন জানাননি ২১ শতাংশ৷ গত আগস্টের জরিপে এই প্রশ্নে ৮৩ শতাংশ মানুষ হ্যাঁ-সূচক আর ১০ শতাংশ মানুষ না-সূচক উত্তর দিয়েছিলেন।
দেশে এখন নির্বাচন হলে কোন দলকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ৩৮ শতাংশ মানুষ। বাকি মানুষের ১৬ শতাংশ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে এবং ৯ শতাংশ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ৩ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ইসলামী দল ও ১ শতাংশ জাতীয় পার্টিকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন।
শিক্ষার্থীদের তৈরি নতুন কোনো রাজনৈতিক দল হলে তাদের ভোট দেবেন ৪০ শতাংশ মানুষ (৩৯ শতাংশ পুরুষ, ৪৪ শতাংশ নারী)। ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন ৪৪ শতাংশ মানুষ (৪৭ শতাংশ পুরুষ, ৩৬ শতাংশ নারী)।
পিআইবিতে বিআইজিডির আয়োজনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: মানুষ কী ভাবছে’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা সহযোগী শেখ আরমান তামিম অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।
জরিপে গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি–পেশার ৪ হাজার ১৫৮ মানুষের মতামত নেওয়া হয়৷ তাঁদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী; ৫১ শতাংশ গ্রামের ও ৪৯ শতাংশ শহুরে। জরিপে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ, চলমান সমস্যা, সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে মানুষের মতামত জানতে চাওয়া হয়। গত ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এই জরিপ চালানো হয়। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বিআইজিডির পালস সার্ভের প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
জরিপের ফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে প্যানেল ও উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহমেদ আহসান, বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মির্জা এম হাসান, নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন প্রমুখ।