উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যু, অন্তর্বর্তী সরকারে শোকের ছায়া
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ (৮৫) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শুক্রবার বেলা তিনটার পর রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
ল্যাবএইড হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হৃদ্রোগে হাসান আরিফের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পরই চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ে হাসান আরিফের একান্ত সচিবের দায়িত্বে থাকা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ল্যাবএইড হাসপাতালে বেলা ৩টা ১০ মিনিটে হাসান আরিফ মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই প্রবীণ আইনজীবীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শুক্রবার দুপুরে বাসায় খেতে বসে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৮৩ বছর বয়সী হাসান আরিফ। পরিবারের সদস্যরা তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট শপথ নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরুতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও হাসান আরিফের ওপর দেওয়া হয়েছিল। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন।
মিশনে ডি এইট সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পর বিকালে হাসান আরিফের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রয়াত উপদেষ্টার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিমানবন্দর থেকেই তিনি ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে যান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও হাসান আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাসপাতালে যান।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক শোক বার্তায় বলেন, হাসান আরিফের মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য এক ‘অপূরণীয় ক্ষতি’।
রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার শোকবার্তায় আইনজীবী হিসেবে হাসান আরিফের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “তার আকস্মিক মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। উপদেষ্টা হাসান আরিফ একজন শীর্ষ আইনজীবী, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। হাসান আরিফ একজন উজ্জ্বল আইনজীবী হিসেবে এবং ভিন্নমতাবলম্বী, ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর ও আমাদের সমাজের প্রান্তিক মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এক শোক বার্তায় বলেন, প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ ‘আইনের জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে’ হারাল।
১৯৪১ সালের ১০ জুলাই কলকাতায় হাসান আরিফের জন্ম। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি করেন।
১৯৬৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তিনি সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
বিএনপি জামায়াত-জোট সরকারের সময়ে ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হাসান আরিফ। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন জানান, এশার নামাজের পর ধানমন্ডি সাত নম্বরে বায়তুল আমান মসজিদে উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের জানাজা হবে। শনিবার বেলা ১১টায় হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে আরেক দফা জানাজা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানান হয়েছে, হাসান আরিফের মেয়ে বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। ২২ ডিসেম্বর রাতে তিনি দেশে ফিরবেন। তারপর দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।