রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৮ পৌষ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১০:০৪, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের জন্য চার–পাঁচ মাস সময় যথেষ্ট : বিএনপি

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের জন্য চার–পাঁচ মাস সময় যথেষ্ট : বিএনপি

বিএনপি ও বিভিন্ন দল ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। এরপর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘আশা করতে পারেন যে নির্বাচন হচ্ছে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে।’

তবে বিএনপি নেতৃত্ব মনে করে, নির্বাচনের জন্য লম্বা সময়ের প্রয়োজন নেই। তারা দ্রুত নির্বাচন চাইছে। এদিকে জামায়াতে ইসলামী সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার কথা বললেও এখন ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে। 

বিএনপি মনে করে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের জন্য চার–পাঁচ মাস সময় যথেষ্ট। ফলে নির্বাচনের জন্য ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চায় না দলটি। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে তাতে আপত্তি থাকবে না বিএনপির।

বিএনপির মিত্রদের মধ্যে ১২–দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব বলে তাঁরা মনে করেন।

জামায়াতে ইসলামীও এখন ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছে। দলটি আগে সার্বিকভাবে সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের কথা বলেছিল। সেই অবস্থানে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল বলেন, সব সংস্কার এখন সম্ভব নয়। সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চান তাঁরা।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের মধ্যেই হতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সব সংস্কার শেষ করতে হবে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একটি যুব সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের একটা আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। 

দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই সরকারকে পুরো সমর্থন দিয়ে আসছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ পর্যন্ত তিনবার বৈঠক করেছি। অনুরোধ করেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখা হয় এবং নিয়মিত আলোচনা করা হয়। কিন্তু তা হয়নি। দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই নির্বাচনের একটা সময়ের কথা বলা হয়েছে। এসব দূরত্ব সৃষ্টি করছে।’

সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো চিন্তা সরকারের ভেতরে কাজ করছে কি না, এমন সন্দেহও তৈরি হয়েছে দলগুলোর মধ্যে। কারণ, স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা নতুন দল গঠন করছেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো দল গঠন করা হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নও তুলেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক  বলেন, নতুন দল গঠনের পেছনে সরকারের একাংশ আছে কি না এবং তাদের জায়গা করে দিতে নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা হতে পারে কি না—রাজনীতিতে এ আলোচনা আছে। আর এসব কারণে সরকারের প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে। ফলে দলগুলোর চিন্তা বোঝার জন্য তাদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বাড়ানো প্রয়োজন।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করাসহ অর্থনীতিতে গতি আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও প্রশাসনে স্থিতিশীলতা আনতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। আর এতে মানুষের মধ্যে সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। দ্রুত নির্বাচনের দাবির পেছনে এ পরিস্থিতিকেও অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। নির্বাচন যত দেরি হবে, সংকট ততই বাড়বে বলে মনে করেন বিএনপি নেতৃত্ব।

দলটির নেতারা মনে করেন, দেশের ভেতরেও আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী–সমর্থক রয়েছেন। তাঁদের দিক থেকেও নানা সংকট তৈরির চেষ্টা থাকতে পারে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে বিএনপির ভেতরে। তবে বিএনপি ও এর মিত্ররা ব্যর্থতার বিষয়গুলোকে সামনে আনছে না, বরং ধৈর্য ধরছে। কিন্তু সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড ও নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতায় সন্দেহ, অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে বিএনপি নেতাদের মধ্যে।

স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্বের কয়েকজন সরকারে রয়েছেন। তাঁদের পক্ষ থেকে নতুন দল গঠনের কথা বলা হচ্ছে। এর পেছনে রাষ্ট্র ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আছে কি না, সেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। দলটির নেতারা বক্তব্যেও তা বলছেন। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ প্রধান অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোকে আঘাত করে বক্তব্য দিচ্ছেন। কখনো কখনো অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডও বিএনপির কাছে বিরাজনীতিকীকরণের চিন্তা বলে মনে হচ্ছে। সরকার দলগুলোকে প্রতিপক্ষ ভাবছে কি না, সেই প্রশ্নও আছে। 

বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁরাও সংস্কার চান। সে জন্য দুই বছর আগে আওয়ামী শাসনবিরোধী আন্দোলনে তাঁরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। এখন যে বিষয়ে সংস্কারের আলোচনা হচ্ছে, তার সবই ওই ৩১ দফায় রয়েছে। শুধু আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের বিষয়টি তাঁদের প্রস্তাবে নেই। কারণ, তাঁরা এটিকে বাস্তবসম্মত মনে করেন না।

দলটি বলছে, সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সব কমিশনের সব প্রস্তাব বাস্তবায়ন এক–দুই বছরে সম্ভব নয়। বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, নির্বাচনব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ—শুধু এই চারটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার চায় বিএনপি। এর বাইরে অন্যান্য সব সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচিত সরকার এসে বাস্তবায়ন করবে।

তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদের একাংশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দল প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চায়। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নির্বাচনের তারিখসহ রোডম্যাপ তৈরি করলে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না।

সরকারের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ মাসের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দেবে। এরপরই সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রস্তাবগুলো নিয়ে এবং নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়