পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় বিরোধ আরও বাড়তে পারে
উপসচিব পুলের কোটা নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই উপসচিবসহ আরও দুই স্তরে পদোন্নতি দিতে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা শুরু হয়েছে। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হলে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দিতে হবে। এই উপসচিব পুলের কোটা নিয়েই বিবাদে জড়িয়েছে দুই পক্ষ।
বর্তমান বিধিমালার আলোকে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরুর খবরে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের আপত্তি থাকলেও উপসচিব পুল নিয়ে স্থায়ী সমাধান চাইছেন তাঁরা।
আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা স্থায়ী একটি সমাধান চাই। সরকার এখন কী করছে, সে সব নিয়ে আমরা কথা বলব না। আমরা কাঠামোগত পরিবর্তন চাই। উপসচিব পুল নিয়ে স্থায়ী সমাধান করা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে আর জটিলতা সৃষ্টি না হয়।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিতে গত সোমবার থেকে এসএসবির সভা শুরু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে গতকাল সন্ধ্যায় দ্বিতীয় সভায় বসে এসএসবি। তিন স্তরে পদোন্নতি দিতে ১ হাজার ৬৮০ জন কর্মকর্তার তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া সরকারের দৈনন্দিন কাজের অংশ। এ ক্ষেত্রে সবশেষ বিধিবিধানের আলোকেই পদোন্নতি দেওয়া হবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫% এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫% কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। প্রশাসন ছাড়া অন্য ক্যাডার থেকে উপসচিব পুলে ঢুকতে হলে সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করতে হয়।
বর্তমানে ১৫৯৮ জন উপসচিব, ৮৬২ জন যুগ্ম সচিব এবং ৪৫২ জন অতিরিক্ত সচিব কর্মরত। তবে উপসচিবের ১৭৫০, যুগ্ম সচিবের ৫০২ এবং অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি স্থায়ী পদ রয়েছে। এসব স্থায়ী পদের বিপরীতে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর বাইরে অন্য কোনো ক্যাডারে এভাবে পদোন্নতি হয় না।
এপিডি উইং সূত্র জানায়, ওপরের স্তরে পদোন্নতির জন্য ৮১৯ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, ৫৭৩ জন উপসচিব এবং ২৮৮ জন যুগ্ম সচিব যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এসব কর্মকর্তার বিষয়ে বিস্তারিত গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছে সরকার। এর বাইরে তাঁদের চাকরিকালের তথ্য-উপাত্ত এসএসবিতে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে এবার বিসিএস ৩০তম ব্যাচকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এই ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৭৭ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এ ছাড়া উপসচিব পুলে যোগ দিতে অন্যান্য ক্যাডারের ২২৩ জন কর্মকর্তা আবেদন করেছেন। তাঁদের সঙ্গে পদোন্নতিবঞ্চিত ৩১৯ জন কর্মকর্তার উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা রয়েছে।
উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে এবার বিসিএস ২৪তমকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ৩৩৬ কর্মকর্তার মধ্যে ৩২৯ জন পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এর বাইরে বিভিন্ন সময় পদোন্নতিবঞ্চিতসহ অন্য ক্যাডারের ২৪৪ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
অন্যদিকে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ২০তমকে বিবেচনা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ২৮৮ জন কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তাঁরা।
তবে প্রশাসন ছাড়া অন্য ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব পুলে কোটা তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে পদোন্নতির দাবিতে গতকাল ১ ঘণ্টা কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করবেন তাঁরা।
অন্যদিকে উপসচিব পুলে প্রশাসনের কোটা কমানোর প্রস্তাবের প্রতিবাদে গত রোববার সচিবালয়ে নজিরবিহীন আড়াই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন প্রশাসন ক্যাডারের চার শতাধিক কর্মকর্তা।
তথ্য: আজকের পত্রিকা