নওগাঁয় বেড়েছে চালের দাম, অভিযানে টাস্কফোর্স
রোপা আমনের ভরা মৌসুমে দেশের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় গত কয়েক দিনে সরু ও মোটা চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে; যার পেছনে কোনো ‘চক্র থাকার‘ দাবি করে অভিযানে নেমেছে টাস্কফোর্স।
পাইকারি বাজারে সরু ও মোটা চালের প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
তবে ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ীদের দাবি, ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
একটি চক্র চালের বাজার ’অস্থিতিশীল করছে’ দাবি করে বৃহস্পতিবার থেকে চালের অবৈধ মজুতবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযান শুরুর তথ্য দিয়েছেন নওগাঁর ডিসি মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।
“বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলমান থাকবে।”
তবে বৃহস্পতিবারের অভিযানে কী মিলল এবং কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
ডিসি আউয়াল বলেন, “রোপা আমনের এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সরকার যে দামে চাল কিনছে সেটি কিন্তু যাচাইকৃত মূল্য। সে দামে চাল বিক্রি করলে কোনো কথা ছিল না।”
ব্যবসায়ীদের দাবি, বন্যায় কয়েকটি জেলায় ধানের ক্ষতি ও বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় চাল আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের লোকজন।
নওগাঁ জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদারের ভাষ্য, “জেলার চালকল মালিকরা বলছেন, দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে চাল উৎপাদন কম হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ও হাটবাজারে ধানের আমদানি কম হওয়ায় ধানের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। ফলে সরু ও মোটা উভয় প্রকার চালের দাম প্রতি কেজিতে দেড় থেকে ২ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।”
তার দাবি, বর্তমানে প্রতিমণ মোটা স্বর্ণা (৫) ধান এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে প্রকারভেদে এক হাজার এক হাজার ৪৩০ টাকা মণ দরে। সরু ধান কাটারি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৮৫০ টাকা এবং জিরা ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৭৫০ টাকা মণ দরে।
এতে বেড়েছে মোটা ও সরু চালের দাম। ফলে চালের বাজার ফের অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
তবে বন্যার কারণে যে খাদ্য ঘাটতি হয়েছে তা মেটাতে দ্রুত বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা হলে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন এই চাল ব্যবসায়ী।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকারের ভাষ্য, “বর্তমানে জেলার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চালের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি স্বর্ণা (৫) ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, কাটারি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, জিরা (মিনিকেট)৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও হাইব্রিড ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।”
গত ১৫ ধরে পর্যায়ক্রমে চালের দাম বেড়েছে বলেও দাবি করেন ক্ষুদ্র এ ব্যবসায়ীরা।
খুচরা চাল ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান বলেন, “পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল মজুত থাকার পরও অধিক মুনাফার জন্য সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কারণ, এখন কৃষকের ঘরে ধান কমে আসায় হাট-বাজারে ধানের দাম প্রতিমণে গত বছরের চেয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে জেলার মিলাররা এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দরে ধান কিনেছেন।
“কিন্তু ধানের দাম বাড়ার অযৌক্তিক দাবি তুলে চাল কল মালিকরা তাদের ইচ্ছে মত দাম বাড়াচ্ছেন।”
নওগাঁ সদরের বরুনকান্দি গ্রামের কৃষক মানিক উদ্দিন বলেন, “সব জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে, ধানের দাম কিন্তু সে হারে বাড়েনি। এক বিঘা জমি এক বছরের জন্য ইজারাবাবদ জমির মালিককে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা।
“এ ছাড়া সার, হালচাষ ও কীটনাশক বাবদ খরচ হয় ৫ হাজার টাকারও বেশি। ধান কাটতে লাগে ৪-৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ২৫ হাজার টাকারও বেশি। অথচ এক বিঘা জমিতে ধান পাওয়া যায় মাত্র ২০ মণ।”
এ অবস্থায় এক হাজার ৪০০ টাকা মণের নিচে ধান বিক্রি করলে কৃষকের কিছুই থাকে না। ধানের দাম কমাতে হলে কৃষি উপকরণের দাম কমাতে হবে বলে মনে করেন মানিক।
ভোক্তা সুলতান আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, “প্রতি কেজিতে ৪-৫ টাকা চালের দাম বাড়ায় আমাদের মত পরিবারের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে।”
বাজার নিয়ন্ত্রণে চালকলগুলোতে মজুতবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি বাজারে সরকারি মনিটরিং করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই ভোক্তা।