বৃহস্পতিবার   ০২ জানুয়ারি ২০২৫ , ১৯ পৌষ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:০৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

হাসিনাকে ফেরত না দেওয়ার ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে ভারত: মাহফুজ

হাসিনাকে ফেরত না দেওয়ার ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে ভারত: মাহফুজ

বাংলাদেশ অনুরোধ করলেও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেওয়ার ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ ভারত নিয়েছে, এমন আলাপ শোনার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘পররাষ্ট্র নীতি সংলাপ’ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের অবর্জাভেশনের বিষয় হচ্ছে যে, এটা পলিটিক্যাল ডিসিশন উনারা নিয়েছেন যে, উনারা উনাকে ফেরত দেবেন না বা এটা আমরা শুনতে পাচ্ছি।

“কিন্তু রাষ্ট্রের জায়গা থেকে আমাদের যেটা দরকার, আমি একটা কথা বলেছি, আমাদের বাস্তববাদী থাকা উচিত। কোনো রকম হঠকারিতা আমরা করতে পারি না।”

প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।

এরমধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত ৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারাদেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অনেক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।

এর মধ্যে একটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং আরেক মামলায় তার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।প্রায় তিনশ মামলায় শেখ হাসিনার বিচার চলার মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত সোমবার ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
 
ভারত সরকারের তরফে শেখ হাসিনাকে চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করা হলেও প্রত্যর্পণের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

এর মধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠানোর অবস্থানে আছে ভারত সরকার। ঢাকার চিঠির জবাব দিতে দিল্লি কয়েক মাস সময় নিতে পারে, এমন কথাও বলা হয় এসব প্রতিবেদনে।

এদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত-হাই কমিশনারদের সঙ্গে ‘নতুন বাংলাদেশ গঠন: অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক সংলাপে যোগ দেন মাহফুজ আলম। তার সঙ্গে ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সামনে আসেন তারা।

পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দীন বলেন, পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপ আয়োজন করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা মাহফুজ ও নাহিদের সঙ্গে রোববার প্রথম সংলাপটি হল।

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘মুখ্য’ হিসেবে বিবেচনা করছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা মাহফুজ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আমাদের দিক থেকে কীভাবে শক্তি বৃদ্ধি করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে চাই। কোন রাষ্ট্র কি করল, সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমাদের সক্ষমতাটা বাড়ানো এবং ওখান থেকে বারগেইনিং পাওয়ারটা বাড়ানো।

“বাংলাদেশ যদি নিজের সক্ষমতা বাড়াতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের বারগেইনিং পাওয়ার বাড়বে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এবং ওটা আমাদের জনগণকে উপকৃত করবে।”

‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’- এমন পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন অন্তর্বর্তী সরকার আনছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “পররাষ্ট্রনীতিতে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’- এটা আমাদের মোটো আকারে ছিল। এটা খুব বেশি পরিবর্তন হয় নাই।

“বরং আমরা যেটা চাই যে, এটা বাস্তবিক সম্পর্ক থাকুক, সবগুলো রাষ্ট্রের সাথে। যেটা বাস্তববাদী, এখানে হঠকারিতার কোনো জায়গা নাই। এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

একইসঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে সামর্থ্য বাড়ানোর আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরেন এই উপদেষ্টা।

বিগত সরকারের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের প্রতিনিধিত্ব না করে একটা দল বা মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেছিল বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগে যে অবস্থায় ছিল, এটা দলীয়করণ হয়ে গিয়েছিল, এটা বিভিন্ন দলের বা কাল্টের প্রতিনিধিত্ব করার বিষয় হয়ে উঠেছিল, কিন্তু আমরা চাই যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে।

“কোনো দল অথবা কোনো কাল্ট নয়। বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে, এটা হচ্ছে আমাদের জন্য সামনের দিকে বড় উল্লম্ফন। এখানে আমরা থাকতে চাই। এবং ওখানে বাংলাদেশকে সামনে রাখার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিকগুলো এবং আমরা সব যে অংশীজন আছি, তার ঐক্যমত চাই আমরা। এটা হচ্ছে আমাদের আউটলুক এখন।”

আওয়ামী লীগ সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নিয়েছিল বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “গত সরকার হঠকারিতার চেয়ে যেটা বেশি করেছে, সেটা হচ্ছে নতজানু একটা পররাষ্ট্রনীতি তারা নিয়েছে।”

বাস্তববাদী নীতি নিয়ে বর্তমানে কাজ করার কথা তুলে ধরে মাহফুজ আলম বলেন, “আমাদের সরকারের জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করছি বাস্তবভিত্তিক হওয়ার জন্য, যদি আমাদের কোনো হঠকারিতা বা আমাদের কোনো ভুল থাকে, সেটা আমরা শোধরানোর চেষ্টা করি।

“এটা হচ্ছে মোটামুটি আমাদের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি যে, কোনোভাবে আমাদের কোনো কাজের কারণে, আমরা এটা মনে করি যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জায়গা থেকে এটা কোনোভাবে গুরুতর হয়ে উঠছে, আমরা সেক্ষেত্রে রিস্ট্রেইন্ট অবলম্বন করি এবং আমরা চেষ্টা করি যে, বাংলাদেশের স্বার্থটাকে সবার আগে রাখার জন্য। সুতরাং এখানে কোনো হঠকারিতার অবস্থান আর নেই।”

মাহফুজ বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হওয়া উচিত। আমাদের বিভিন্ন অঞ্চল আছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে ভারত, চীন এবং মিয়ানমার, বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে আমাদের এনগেজমেন্টগুলো কেমন হওয়া উচিত।

“এবং আমরা যে পর্যায়ে এসে রাষ্ট্রকে সংস্কারের প্রস্তাবনা এবং পদক্ষেপ নিচ্ছি, ওগুলা আসলে কীভাবে টেকসই করা যায় এবং এ সময়ে এই সংস্কারগুলোকে কীভাবে ভায়েবল করে তোলা যায়, সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের মতামত হিসাবে বলেছি যে, আমাদের একটা বিস্তৃত মতবিনিময় দরকার, সব রাজনৈতিক দল ও আদর্শের মধ্যে।”

সরকার বদলের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি বদলে যাবে, এমন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে মতৈক্য তৈরিতে কাজ করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এবং আমাদের দরকার হচ্ছে, সবাইকে নিয়ে দেশে একটা জাতীয় মতৈক্যের দিকে এগোনো।

“এবং পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে যে ঐকমত্য, এটা যাতে জাতীয় জায়গা থেকে হয়, জাতীয় ঐকমত্যে হয়, যাতে এটা কোনোভাবে সরকার অদলবদলের প্রেক্ষিতে এটার কোনো রদবদল না হয়, বরং এটা খুবই বাস্তবভিত্তিক পথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাতে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করে এবং বাংলাদেশকে একটা মর্যাদাময় জায়গা হিসাবে সারা দুনিয়ার কাছে উপস্থাপন করতে পারে।”
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়