১৭১ মামলা ডিবি হারুনের বিরুদ্ধে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে মানুষ হত্যার অভিযোগে এখন পর্যন্ত সাবেক ও বর্তমান মিলে ৯৫২ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদ। সারা দেশে হারুনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১৭১টি।
এত মামলা মাথায় নিয়ে হারুনের বিরুদ্ধে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও নিজে থেকে আত্মসমর্পণ করেছেন সাবেক পুলিশপ্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন। প্রায় ৫০ দিনের বেশি রিমান্ডে থাকার পর তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। তার নামে মামলা রয়েছে ১৫৫টি।
এ ছাড়া বেশি মামলা হওয়ার তালিকায় রয়েছে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১৭টি, অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকারের নামে ১২৫টি, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৪৬টি এবং অতিরিক্ত ডিআইজি এস এম মেহেদী হাসানের নামে ৩১টি।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীদের হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় ৯৫২ জনকে আসামি করা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৮ জন পুলিশ সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, বাকিদের অনেকে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন, কেউব দেশেই আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে মামলার এজাহারে তাঁদের পলাতক দেখানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সারা দেশে দায়ের হওয়া পুলিশের বিরুদ্ধে এসব মামলা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আসামির তালিকায় রয়েছেন ছয়জন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক, সাবেক ৩৬ অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, ৫ জন অতিরিক্ত আইজিপি, সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, পরিদর্শক, উপপরিদর্শক, কনস্টেবল ছাড়াও বিভিন্ন পদ-পদবির সদস্য।
এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পুলিশ তার অস্ত্র ব্যবহার করবে জনস্বার্থে এবং আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে। আইন সবার জন্য সমান। ন্যায়ানুগভাবে এসব মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করা উচিত। মামলা নিয়ে একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দোষী-নির্দোষ চিহ্নিত করতে বিলম্ব হলে বাহিনীর সদস্যদের মনোবলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে নির্বিচার গুলি ও মানুষ হত্যার ঘটনা বাহিনীর ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলপ্রয়োগের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার দাবি নানা মহল থেকে ওঠে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সাবেক ও বর্তমান বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তারের জন্য মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে আবেদন করা হয়। এরপর বিভিন্ন ধাপে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক কর্মকর্তার অভিযোগ, অনেককে বিপাকে ফেলতে ষড়যন্ত্র করে আসামির তালিকায় নাম দেওয়া হয়। ব্যাচমেট ছাড়াও পুলিশের কিছু সদস্য এর সঙ্গে জড়িত। কেউ আবার বাদীপক্ষকে নাম ঢোকাতে প্রলুব্ধ করেছেন—এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। তাঁদের ভাষ্য, প্রকৃত দোষীদের বাইরে নিরাপদ কাউকে আসামি করা হলে মামলার গুরুত্ব নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন ভুক্তভোগী।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, পুলিশের অপরাধের তদন্ত পুলিশের হাতে থাকা উচিত নয়। এটা শুধু পুলিশ নয়, অন্যান্য বাহিনীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এতে নিরাপত্তাবোধ ও স্বচ্ছতার বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়।