ভারতে তিন শিশুর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত
কোভিড মহামারীর প্রায় পাঁচ বছর পর নতুন করে আরেক ভাইরাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিশ্বে। নাম ‘হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাস’ (এইচএমপিভি)। এ ভাইরাসটিও কোভিডের মতো সেই চীনেই প্রথম শনাক্ত হয়েছে।
উপসর্গও অনেকটা কোভিডের মতোই। দ্রুতই ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। সোমবার ভারতে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এইচএমপিভি-তে ৩ শিশুর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দক্ষিণ ভারতের শহর বেঙ্গালুরুতে ২ শিশু ও আহমেদাবাদে ১ শিশুর দেহে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
দুই শিশুর একজনের বয়স ৩ মাস। তাকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আরেকজন ৮ মাস বয়সী শিশু বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে সুস্থ হয়ে উঠছে বলে জানানো হয়েছে খবরে।
ওদিকে, গুজরাট রাজ্যের বৃহত্তম শহর আহমেদাবাদে ২ মাস বয়সী শিশুর দেহে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ শিশুটিই ভারতে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগী।
যদিও সংক্রমিত এই তিন শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কেউই সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাইরে ভ্রমণ করেনি। ফলে বাইরের কারও কাছ থেকে তারা নতুন ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে এমনটি বলা যাচ্ছে না।
হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস সংক্রমণ হলে সাধারণভাবে সর্দি হয়, বারবার নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে, প্রচুর কফ উঠতে পারে। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়াও হতে পারে।
এইচএমপিভি ভাইরাস ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি বিভিন্ন দেশে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা বাড়ছে। মালয়েশিয়ায় এইচএমপিভি সংক্রমণ বাড়ছে।
২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় ৩২৭ টি সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ২২৫ টি সংক্রমণ থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে হাত ধোয়া, মাস্ক পরার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ভারতে সম্প্রতি ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (আইসিএমআর) এর শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা পর্যবেক্ষণের চলমান নজরদারিতেই ৩ শিশুর দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
গণমাধ্যমটি জানায়, এর আগে আহমেদাবাদের শিশুটিকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। তবে তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
আহমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ভাবিন সোলাঙ্কি বলেন, “২৬ ডিসেম্বর শিশুটির শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল থেকে দেরিতে রিপোর্ট করায় আমরা আজ (সোমবার) বিষয়টি জানতে পারি।”
ওদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রী সোমবার এইচএমপিভি প্রস্তুতি নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছে। এইচএমপিভি একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস। বিশেষত শিশু, বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধে দুর্বল মানুষকে সহজেই কাবু করতে পারে ভাইরাসটি।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রোববার ঘোষণা করেছে, তারা এইচএমপিভি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসগুলোর উপর নজর রাখছে।
পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য ৪ জানুয়ারি একটি জয়েন্ট মনিটরিং গ্রুপ (জেএমজি) বৈঠক করে। সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি), ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, “জনসাধারণকে তাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এবং অন্যদের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে ভ্রমণের পরিকল্পনা করা ব্যক্তিদের এই ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক করা হচ্ছে।”
কোভিডের মতো যেন ভাইরাসটি চাপ সৃষ্টি না করতে পারে তাই পূর্ব সতর্কতা হিসেবে এইচএমপিভি পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বাড়িয়েছে দেশটির সরকার।
আইসিএমআর সারা বছর ধরে এইচএমপিভি প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করবে, পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতা (আইএলআই) এবং গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (এসএআরআই) এর মতো শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার ওপরও নজরদারি রাখবে।