বুধবার   ২২ জানুয়ারি ২০২৫ , ৮ মাঘ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ১২:২৬, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২২:৫৪, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

জনপরিষেবায় দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে সরকার

জনপরিষেবায় দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে সরকার

আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয়েছে ১৬ বার। পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরায় ১৪ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দামও। এতবার এসব জনপরিষেবার মূল্যবৃদ্ধির পেছনে বিগত সরকারের দুর্নীতি-অনিয়ম, লুটপাট এবং লুক্কায়িত বা গোপন নানা ব্যয়কে (হিডেন চার্জ) দায়ী করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও এসব জনপরিষেবার দাম বাড়ানোর নানা উদ্যোগ, প্রস্তাব ও পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। এসব ব্যয়ের কারণ অনুসন্ধান ও তা কমানোর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো জনপরিষেবাগুলোর মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতিবিদ ও নাগরিক সংগঠনগুলোর ভাষ্যমতে, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনসাধারণের বড় প্রত্যাশা ছিল উচ্চ মূল্যস্ফৃীতির তীব্র চাপ থেকে রেহাই দিতে নাগরিকদের ইউটিলিটি বা জনপরিষেবা খাতের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য খাতগুলোর দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধের পাশাপাশি অযাচিত ব্যয় কমিয়ে আনা হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার আমলে সে পথে না গিয়ে জনসাধারণের ব্যয়ের বোঝা আরো বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে এ ধরনের উদ্যোগ জনজীবনকে আরো খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলবে। অভ্যুত্থানে পতিত বিগত সরকারের বিভিন্ন সময়ে নেয়া প্রকল্পগুলোয় অনেক হিডেন চার্জ বা লুক্কায়িত খরচ যুক্ত হয়েছে। এগুলোকে যৌক্তিকতার নিরিখে পর্যালোচনা হওয়া উচিত। সেটি করা গেলে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানিতে খরচ কমানো অনেকাংশেই সম্ভব ছিল।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি নিয়ে বিগত সরকার যে পদ্ধতিতে চলেছে, এ সরকার তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে। বিগত সরকারের করা চুক্তি এমনকি যেসব প্রকল্পগুলোকে খতিয়ে দেখতে চাচ্ছে না। এগুলো গ্রাহক থেকে শুরু করে জনসাধারণের জন্য দুর্ভাগ্য তৈরি করেছে। পানির মূল্য নির্ধারণে একটি ওয়াটার রেগুলেটরি বডি তৈরির কথা বলা হয়েছিল। অর্থাৎ পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে রেগুলেটরি কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছিল। বিগত সরকার সেগুলো বাতিল করেছিল। ওয়াসা নিজের মতো করে পানির দাম বাড়াচ্ছে। যেখানে কোনো জবাবদিহিতা বা যৌক্তিকতা নেই। এতে ইউটিলিটি খাতের ভয়াবহ যেসব দুর্নীতিগুলোর বিষয়ে যেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাবে না, তেমনি দাম কমানোর সুযোগও তৈরি হবে না। বরং বাড়তেই থাকবে।’

দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ওয়াসার। অন্যতম প্রধান এ পরিষেবার দাম বিগত সরকার দফায় দফায় বাড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রত্যাশা তৈরি হয়, শহুরে জীবনে ব্যয়চাপ কমাতে পানির দাম যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এর উল্টো পরিস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সম্প্রতি রাজশাহী ওয়াসা পানির দাম ৩০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিগত দেড় দশকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয় ১৬ বার। সরকার পতনের আগেও গত বছরের ১ জুলাই পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। ঢাকা ওয়াসার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির কারণ দেখিয়ে এ পানির দাম বাড়ানো হয়, যা গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১৬ টাকা ৭০ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকের জন্য একই পরিমাণ পানির দাম ৪৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৪৬ টাকা ২০ পয়সা। এর আগে একই কারণ দেখিয়ে ২০২১ সালের ১ হাজার লিটার পানির দাম বাড়ানো হয় ৫ শতাংশ। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও পানির উৎপাদন, বিতরণ ও বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য দেখিয়ে বাড়ানো হয়েছিল ২০২০ সালের ১ এপ্রিল। ওই সময় গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ১১ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকের পানির দাম ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৫ শতাংশ, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ৫ শতাংশ ও ২০১৭ সালের ১ আগস্ট ৫ শতাংশ করে পানির দাম বাড়ায় সরকার। সব মিলিয়ে ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ছয় দফায়।

এভাবে বারবার পানির দাম বাড়ানোয় গ্রাহকের বিড়ম্বনা বেড়েছে। বিশেষ করে ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিপুল পরিমাণ সিস্টেম লস, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ঢাকা ওয়াসার এমডির দায়িত্ব পালন করা তাকসিম এ খানের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগগুলো নিয়ে এখনো কার্যকর কোনো অনুসন্ধান হয়নি। এছাড়া পানি পরিশোধনাগার নির্মাণ, প্রকল্পে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ক্রয়জনিত বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির বিষয়েও কোনো তদন্ত হয়নি।

পানির দামের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান এমডি ফজলুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছর ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর দাম কমানোর বিষয়টি বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু এখনো ঢাকা ওয়াসার কোনো বোর্ড গঠন হয়নি সে কারণে পানির দাম কমানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

জনপরিসেবাগুলোর মধ্যে অন্যতম খাত হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিগত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতে সক্ষমতা বাড়াতে বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও গ্রাহকের খরচ কমানো যায়নি। উল্টো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষ আইনের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এ খাতে বড় ধরনের অর্থ লোপাট, অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে দেখা গেছে, গত দেড় দশকে বিদ্যুতের পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে ১২ বার এবং খুচরা পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে ১৪ বার। এর পেছনে বিদ্যুৎ খাতের অযাচিত চুক্তি, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, বিদেশী ঋণের বিপরীতে অলাভজনক প্রকল্প বাস্তবায়নজনিত ব্যয়বৃদ্ধিকে দায়ী করা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ব্যবহার না করে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের পেছনেই দেড় দশকে অন্তত দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করায় প্রতি বছর সরকারকে ভর্তুকি হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি ছিল ৩৯ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও এ বাবদ ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির পরও গড় উৎপাদন ব্যয় কমানো যাচ্ছে না। উল্টো তা বছরের পর বছর বেড়ে চলেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুতের কিলোওয়াটপ্রতি গড় উৎপাদন খরচ ছিল ১১ টাকা ৩৩ পয়সা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে ১১ টাকা ৩৫ পয়সা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গ্রহণের পর ২০০৮-০৯ সালে বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ সময়ে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা অন্তত ২৫ হাজার মেগাওয়াট বাড়ানো হয়েছে। আর কেন্দ্র নির্মাণ করে গত দেড় দশকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে শুধু গত পাঁচ বছরেই গুনতে হয়েছে সাড়ে ৮৩ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে সরকারকে।

বিদ্যুৎ খাতে সক্ষমতা বাড়াতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশী ঋণ গ্রহণ, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ভাড়া পরিশোধ, স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ক্রয়চুক্তিতে বিদ্যুতের দাম ডলারে পরিশোধের সুযোগ রাখা, বিপুল দামে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি আমদানি, সাশ্রয়ী মূল্যের কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ব্যয়বহুল বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার কারণে অপ্রয়োজনীয় খরচ বেড়েছে। এসব খরচ কমানোর জন্য বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি দ্রুত পর্যালোচনা, ক্রয়চুক্তির লুক্কায়িত খরচ শনাক্ত এবং ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ খাতে বিগত সরকারের চুক্তি পর্যালোচনায় জাতীয় কমিটি কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং বিভিন্ন চুক্তির মধ্যে লুক্কায়িত খরচ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম খতিয়ে দেখতে একটি জাতীয় কমিটি করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। আমরা সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আমাদের হয়তো বিদ্যুতের ট্যারিফ নিয়ে পুনরায় আলোচনা করতে হতে পারে। বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি এখন ৪০ হাজার কোটি টাকা। এ পরিস্থিতির মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কীভাবে কমবে? শিল্পে আমরা গ্যাস দিচ্ছি ৩০ টাকা করে, কিন্তু এ গ্যাস আমদানি করে ৬৫ টাকার ওপরে পড়ে। বিদ্যুতের দাম আমরা বাড়াইনি। আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্থাগুলোকে বলেছি, তাদের খরচ কমাতে। বিগত কয়েক বছরে এ খাতে যে পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে, তাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে।’

বিপিসি জ্বালানি তেলে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করছে। যে কারণে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমানো যাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম আরো কমানোর ক্ষেত্রে আমরা আগ্রহী। কিন্তু প্রধান সমস্যা হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে জ্বালানি তেলের দাম আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। দাম আরো কমানো হলে দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তা ভারতে পাচার হয়ে যেতে পারে। আমরা প্রতিবার প্রাইসিং ফর্মুলার ক্ষেত্রে বিষয়টি চিন্তা করি। তবে বড় সমস্যা হলো পাচার। সেটি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে কেনা এ জ্বালানি তেল প্রতিবেশী দেশে পাচার হয়ে গেলে তখন সেটি আবার আরেক সমস্যা সৃষ্টি করবে।

নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে দুই বছর আগে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছিল গ্যাসের। কিন্তু দুই বছর পরও শিল্পে গ্যাস সংকট কাটেনি। এখন আবার সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলে গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়াতে চায় সরকার। এরই মধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব পেট্রোবাংলা রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসিতে পাঠিয়েছে। দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পেছনে প্রভাব রাখছে মূলত আমদানীকৃত এলএনজির দাম। আমদানি শুরুর পর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে এ গ্যাস স্থানীয় গ্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করায় খরচ তুলতে পারেনি সরকার। যে কারণে এ খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হয়েছে।

দেশে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে স্থানীয় গ্যাস খাতে বিনিয়োগ করা যায়নি। যে হারে স্থানীয় গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে, সে হারে গ্রিডে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো যায়নি। বিগত সরকার সহজপথে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে তৎকালীন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, সরকারের আমলা ও উপদেষ্টারা কমিশন বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কমিশন বাণিজ্যে সুবিধা নিয়ে দুই-তিনটি কোম্পানিকে এলএনজি আমদানি করার কাজ দেয়া হয়েছে। এসবের প্রভাবে হওয়া বিপুল পরিমাণ লোকসান ঠেকাতে গিয়ে বর্তমান সরকারও আগের সরকারের মতো দাম বাড়ানোর নীতিতে চলছে। অথচ সিস্টেম লসের নামে প্রতি বছর যে পরিমাণ গ্যাস চুরি হয়ে যাচ্ছে, তার হিসাব হওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা।

বিদ্যুৎ জ্বালানিসহ পরিষেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধি এবং অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়গুলো উদ্ঘাটন করা দরকার উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এটা ঠিক যে অতীতে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অনিয়ম করে এসব খাতে বিনিয়োগ ও কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। সেবার মূল্য বাড়িয়ে এ বর্ধিত ব্যয়ের বোঝা সাধারণ মানুষের ঘাড়ে তুলে দেয়া হয়েছে। এখন এগুলোর কার্যকারণ বের করতে হবে। তারপর সেখানে ব্যয় সাশ্রয় করতে হবে, যাতে করে খরচ কমানো যায়। ভোক্তার ওপর এর প্রভাব যাতে আর না পড়ে। সেই জায়গায় এখন হাত দেয়া দরকার। এতে সময় লাগবে, সেটা ঠিক। ঋণের টাকা নিয়ে অনেক প্রকল্প করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক ঋণের টাকায় করা হয়েছে। মূল কাজটা হলো এগুলো উদ্ঘাটন করা এবং সামনের দিকে যেন অতিমূল্যায়িত বিনিয়োগ না হয়, সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।’

সর্বশেষ

জনপ্রিয়