শুক্রবার   ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তসলিমা নাসরিনের বই নিয়ে উত্তেজনা, বইমেলায় স্টলে চড়াও ‘তৌহিদী জনতা

তসলিমা নাসরিনের বই নিয়ে উত্তেজনা, বইমেলায় স্টলে চড়াও ‘তৌহিদী জনতা

তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় ‘সব্যসাচী প্রকাশনা’র স্টলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ‘তৌহিদী জনতা’র নামে একদল লোক স্টলটিতে গিয়ে প্রকাশককে ঘিরে ধরে স্লোগান দিতে থাকলে পিরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সব্যসাচীর প্রকাশক শতাব্দী ভবকে বইমেলায় তাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নিয়ে যায়।

পরে পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষও ঘিরে রাখে উত্তেজিত জনতা। উত্তেজিত জনতার দাবি, এই প্রকাশক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটাক্ষ করে ইসলামপন্থিদের ‘জঙ্গি’ বলে গালাগাল করেছেন এবং মেলায় এসে ‘জয় বাংলা/জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে সাধারণ-জনতার ওপর হামলা করেছেন।

ঘটনার পর থেকে বন্ধ আছে সব্যসাচীর ১২৮ নম্বর স্টলটি। তবে বাংলা একাডেমি বলছে, তারা স্টল বন্ধ করেনি।

উত্তেজিত জনতার ভিড়ে শামীম নামের একজন বলেন, “প্রকাশক ফেইসবুকে পোস্ট লিখে, আমাদের মুসলমানদের জঙ্গি বলছে। তিনি মেলায় এসেও স্লোগান দিয়ে উত্তেজনা তৈরি করেছেন। পরে আমরা তাকে ঘিরে ধরলে পুলিশ তাকে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যায়।”

সব্যসাচীর প্রকাশক শতাব্দী ভব হামলা হওয়ার শঙ্কার কথা আগেই বলেছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তাও দিয়েছিলেন।

প্রকাশনা সংস্থাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সানজানা মেহরিনও একাধিক ফেইসবুক পোস্টে বলেছিলেন, তসলিমা নাসরিনের বই রাখার কারণে কিছু লোক তাদের প্রকাশনাটি ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

এমন হুমকির বিষয়ে খোদ লেখক তসলিমা নাসরিনও সোমবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, “মৌলবাদি সন্ত্রাসীরা বইমেলার সব্যসাচী স্টল গুঁড়ো করে দিতে চেয়েছে। সুতরাং বইমেলা কর্তৃপক্ষের কী করা উচিত? সব্যসাচী স্টলের সবার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত। যে সন্ত্রাসীরা স্টল গুঁড়ো করে দেবার, ধ্বংস করে দেবার, প্রকাশককে আর লেখককে খুন করার হুমকি দিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া উচিত। তা না করে তারা প্রকাশককে বলেছে বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে বই সরিয়ে নিতে। সন্ত্রাসীরা থেকে যাবে, বই সরে যাবে। এই হলো প্রো-সন্ত্রাসী ক্ষমতাবানদের বিচার।” তবে বাংলা একাডেমি বলছে, তারা বই সরিয়ে নেওয়ার কোনো নির্দেশনা দেননি।

বইমেলা টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক মো. সেলিম রেজা বিকালে বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইটি নিয়ে কথা হচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা তসলিমা নাসরিনের বই সরিয়ে নিয়েছে। মেলা কমিটি বইটি সরিয়ে নেওয়ার কোনো নির্দেশনা দেয়নি।”

আর সন্ধ্যার ঘটনার পর ফোন করা হলে সেলিম রেজা বলেন, “এই বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।”

মহাপরিচালককে একাধিকবার ফোন করা হলেও ধরেননি। মহাপরিচালকের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, তিনি একাডেমির কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করছেন।

পরে বইমেলা কমিটির পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক সেলিম রেজা। তিনি বলেন, “এই ঘটনার পর পুলিশের সহযোগিতায় মব থামানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি কোনো স্টল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়নি, কোনো বইও নিষিদ্ধ করেনি।”

সব্যসাচীর প্রকাশক শতাব্দী ভবর স্ত্রী সানজানা বলেন, “তসলিমা নাসরিনের বই রাখার কারণে দুই দিন ধরেই কিছু লোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে আমাদের স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

“এই বিষয়টি আমরা পুলিশ এবং বইমেলা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। তারা আমাদেরকে বই সরিয়ে নিতে বললে, আমরা আজকে বই সরিয়ে নিয়েছি। তারপরও তারা এসে আমাদের স্টলে হামলা করেছে। ভবকে পুলিশ নিয়ে গেছে। এখনও পুলিশের কাছেই আছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাত পৌনে ৯টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, “প্রকাশককে আমরা নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছি। তার বিষয়ে পরবর্তী আদেশের অপেক্ষায় আছি।”

এখন পরিস্থিতি কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন পরিস্থিতি আমাদের কন্ট্রোলেই আছে। যারা এসেছিল তাদেরকে বুঝিয়েছি, তারা চলে গেছে।”

সোমবার ছিল বইমেলার দশম দিনে নতুন বই এসেছে ৮৪টি।

এদিন ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুদরত-ই-হুদা এবং হিজল জোবায়ের।

বিকেল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ড. মনিরুজ্জামানের সময়রেখা: ভাষাবিজ্ঞানের ত্রিকালদর্শী পরিব্রাজক’ শীর্ষক আলোচনা। এখানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাশরুর ইমতিয়াজ। আলোচনায় অংশ নেন করেন সালমা নাসরীন এবং মামুন অর রশীদ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মনসুর মুসা।

সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’, ‘নৃত্য সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ‘বিরোহী শিল্পীগোষ্ঠী’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন আব্দুল লতিফ শাহ, বাউল সুভাষ বিশ্বাস, আবুল কালাম আজাদ, সাধিকা সৃজনী তানিয়া, এলাহী মাসুদ, কাজী দেলোয়ার হোসেন, এ টি এম গোলাম মোস্তফা, পিয়াল হাসান এবং শামিমা সুলতানা। মঙ্গলবার একাদশতম দিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জীবন ও সাহিত্য: শাহেদ আলী’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিবলী আজাদ। আলোচনায় অংশ নেবেন নাজিব ওয়াদুদ এবং মোস্তাক আহমাদ দীন। সভাপতিত্ব করবেন চঞ্চল কুমার বোস।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়