শুক্রবার   ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ১১:১২, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে : ইউনূসকে জ্যাকবসন

নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে : ইউনূসকে জ্যাকবসন

যুক্তরাষ্ট্রের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত ‘অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা বলেন তিনি।

বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা, রোহিঙ্গা সংকট, অভিবাসন এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও তারা আলোচনা করেন।

জ্যাকবসন জোর দিয়ে বলেন, নতুন সরকারের নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হওয়া উচিত।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। ইতোমধ্যে এ সরকার ছয় মাস পূর্ণ করলেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি, যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ রয়েছে।

বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চেয়ে এলেও অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা আগে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সারার ওপর জোর দিচ্ছেন।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস গত বিজয় দিবসে বলেছিলেন, সংস্কার কতটা করে ভোটে যাওয়া হবে তার ওপর নির্ভর করে ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন।

তবে সোমবার যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার পর বেরিয়ে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করছে বলে তাদের ‘আশ্বস্ত’ করেছেন ইউনূস।

অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ওই বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছেন, নির্বাচন কবে হবে তা নির্ভর করছে ‘রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার ওপর’।

গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন, বাকিরা অধিকাংশই রয়েছেন আত্মগোপনে।

শেখ হাসিনাসহ অনেকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সম্প্রতি শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে যারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।

আওয়ামী লীগ যেহেতু নিষিদ্ধ হয়নি, তত্ত্বীয়ভাবে তাদের নির্বাচন করতে বাধা নেই। তবে এ বিষয়ে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর বিরোধিতা প্রবল।

আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন রাখা হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন গত ১১ জানুয়ারি বলেন, “সময় আসুক দেখবেন, কারা কারা নিবন্ধিত অবস্থায় থাকে। যারা যারা থাকবে, তাদের নিয়ে নির্বাচন করব আমরা। অপেক্ষা করুন, আমরাও অপেক্ষা করে দেখি- ওই সময় পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করে দেখি।”

বাসস লিখেছে, যমুনার বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নিয়েও প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চান যুক্তরাষ্ট্রের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স।

ইউনূস তাকে বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তাদের অভিযানের সময় ‘যে কোনো মূল্যে মানবাধিকার বজায় রাখার’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং এর তত্ত্বাবধানে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করার জন্য সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর কথা বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “সংস্কারগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর রাজনৈতিক দলগুলো সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি বাংলাদেশি সমাজে ‘পুনর্মিলনের’ আহ্বান জানিয়েছেন। ‘প্রতিশোধের চক্র ভেঙে’ দেশে শান্তি ও সম্প্রীতির ভিত্তি তৈরি করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমরা সবাই এই দেশের সন্তান। তাই আমাদের মাঝে প্রতিশোধের কোনো স্থান থাকা উচিত নয়।”

দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তাও কামনা করেন মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ইউএসএআইডির ক্ষেত্রে যাই ঘটুক না কেন, পুনর্গঠন, সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের মার্কিন সহায়তা প্রয়োজন। এটা বন্ধ করার ‘সময় এখন নয়’।

বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি’র জীবন রক্ষাকারী প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সহায়তা স্থগিত করার মার্কিন সিদ্ধান্তের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ইউনূস।

বাংলাদেশ এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের হাইতির মত দেশগুলোতে ডায়রিয়া ও কলেরাজনিত মৃত্যু প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইসিডিডিআর,বি-এর ভূমিকা তিনি মার্কিন কূটনীতিকের সামনে তুলে ধরেন।

তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখায় মার্কিন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মার্কিন সহায়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়