রোববার   ০৯ মার্চ ২০২৫ , ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:১১, ২ মার্চ ২০২৫

ইফতারের ফলের দাম বাড়ছে, দেখার কেউ নেই

ইফতারের ফলের দাম বাড়ছে, দেখার কেউ নেই

তিন দিন আগেও কিছুটা ‘স্থিতিশীল’ থাকা রোজার বাজারে এখন এসে একটার পর একটা জিনিসের দাম বাড়ছে; যে তালিকায় সবশেষ যোগ হয়েছে ইফতারের ফলমূল।

রাজধানীর বাজারগুলোয় এক দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন ফলের দাম কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৫০ টাকা, যার ‘দায়’ পাইকারদের ওপর দিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা।

রোজার কেনাকাটা শুরুর আগে থেকেই ফলের বাজার চড়া। এর মধ্যে আরও চড়ে যাওয়ায় কিছু বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বিতণ্ডাও হতে দেখা গেছে।

শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, জাতভেদে প্রতিকেজি আপেল ৩২০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাল্টা ৩০০ টাকা, কমলা ২৮০, আঙুর কালো ৪২০ ও সবুজটা গড়ে ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল।

একদিন আগেও আপেল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাল্টা ২৮০, কমলা ২৫০, আঙুর ৪০০ টাকা ও সবুজটা গড়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া গেছে।

রাজধানীর পলাশী বাজারে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি বিক্রেতার উদ্দেশে বলছিলেন, “একদিনের মধ্যে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম বাড়ে কীভাবে?

তখন বিক্রেতা শামসু মিয়া বলেন, “দাম তো আমি বাড়াইনি; যে দামে কেনা, সে হিসাবেই বেচা।” এ বাজারের সব ব্যবসায়ীকে প্রায় একই দামে ফল বিক্রি করতে দেখা যায়।

পলাশী বাজারের শামসু মিয়ার মত একই যুক্তি শোনালেন হাতিরপুল বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক।

“আড়তদার আমাদের যে রেট ধরে দেয়, আমরা সেই হিসাবে বিক্রি করি। পর্যাপ্ত মাল পাওয়া যাচ্ছে না; তাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।”

গত বৃহস্পতিবার রোজা শুরুর তিন আগেও বাজার স্থিতিশীল থাকার কথা বলেছিলেন ক্রেতা-বিক্রেতারা; সেদিন সংকট ছিল শুধু সয়াবিন তেল নিয়ে, যার সূত্রপাত আরও মাস খানেক আগেই।

এর মধ্যে পরের দিন শুক্রবার বেড়ে যায় লেবু, শসা ও বেগুনের দাম। কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়ে গরুর মাংস। এদিন মুরগি ও কিছু মাছের দামও কেজিতে বেড়ে যায় ২০ থেকে ৩০ টাকা।

এর মধ্যে শনিবারের বাজারে ভোক্তার স্বস্তির জায়গাটা আরও সংকুচিত হয়ে যায় ফলমূলের দামে।

কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী সুমন বলেন, “আমরা আড়ত থেকে এনে সরাসরি বেচি, লাভ কম করি।

“বাজার এখন চড়া, কদিন আগেও দাম কম ছিল। এখন প্রতিকেজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি পড়ছে।”

এ বাজারে ফল কিনতে আসা বেসরকারি চাকুরে মো. কাইয়ুম বলেন, “আমাদের এখানে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।


“সরকার এখনই জরুরিভিত্তিতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ফলমূল দিয়ে ইফতার করা সম্ভব হবে না।”


হাতিরপুলে ফল কিনতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা তাবাস্সুম আক্তার বলেন, “এক-দুইদিনে প্রত্যেক ফলের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। কী আর করা, বেশি দামেই নিতে হবে।

“আর দাম বাড়ার বিষয়ে কী বলব; কার কাছে বলব। কিছুই বলার নাই; নিতে হবে নিয়ে যাচ্ছি।”

রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকার ফল বিক্রেতা শরিফ উদ্দিন বলেন, “বাদামতলীর পাইকারি বাজারে ফল কিনতে গিয়ে আমরা বোকা হয়ে যাই। এতে দাম কীভাবে হয়।

“সেখানে দাম বাড়লে আমাদের কী করার আছে, আপনিই বলুন।”

খুচরা বিক্রেতাদের এসব বক্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নূরউদ্দিন আহমেদ বলেন, এলসি কমে যাওয়ার কারণে বাজারে ফলের সরবরাহে কিছুটা সংকট আছে। তাছাড়া প্রথম রোজার আগে বিভিন্ন কারণে ফলের দাম একটু বেড়ে যায়, তাই হয়েছে।

ফলের দাম কেজিতে ১০-১২ টাকা করে বেড়ে যাওয়ার তথ্য দেন তিনি।

তালিকায় তরমুজ, আনারস, পেঁপেও

ভরা মৌসুম না হলেও বাজারে তরমুজের ‘বেশ’ সরবরাহ রয়েছে; প্রায় প্রতিটি দোকানেই সাজানো। কিন্তু দাম আগের দিনের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি।

প্রতিকেজি তরমুজের দাম চাওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা। তরমুজের আকার ভেদে দাম কম-বেশি হয়। একেবারে ছোটগুলোর কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা।

শনিবার রোজা শুরুর একদিন আগে একটি আনারসের দাম উঠেছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়, যা গেল সপ্তাহেও ২৫ থেকে ৩০ টাকায় মিলেছে।

১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে যে পেঁপে মিলত, সেটায় লাগছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

কারওয়ান বাজারে ফল কিনতে আসা এক সংবাদকর্মী বলেন, “ব্যবসায়ীরা রোজা সামনে রেখে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজ তরমুজ গতকালের থেকে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। অন্যান্য ফলেও বেড়েছে।”

হাতিরপুল বাজারের বাঙ্গি বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, “বাঙ্গির দাম একটু বাড়তি, এটা কেজি হিসেবে বিক্রি করি না। ২০০ টাকা থেকে শুরু করে আমার এখানে সাড়ে তিনশত টাকা দামের বাঙ্গি আছে। ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি হবে।”
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়