রোববার   ০৯ মার্চ ২০২৫ , ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:০৪, ৫ মার্চ ২০২৫

গুলশানে ‘তানভীর ইমামের বাড়ি’ বলে বাসায় ঢুকে শতাধিক ব্যক্তির ‘তল্লাশি’

গুলশানে ‘তানভীর ইমামের বাড়ি’ বলে বাসায় ঢুকে শতাধিক ব্যক্তির ‘তল্লাশি’

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের এক বাড়িতে ‘তল্লাশির’ নামে মধ্যরাতে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েছে একদল ব্যক্তি, যাদের দাবি ওই বাড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের।

ওই বাড়িতে ‘অবৈধ অস্ত্র ও ছাত্র-জনতার হত্যাকারীরা’ লুকিয়ে আছে– এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে ‘তল্লাশি’ করার কথা বলছেন তারা।

খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে পুলিশ যায়। রাত দেড়টার দিকে যান সেনা সদস্যরা। ততক্ষণে ওই বাড়ির ভেতরে সবকিছু তল্লাশির নামে তছনছ করে ফেলা হয়।

গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান রাত ২টার দিকে বলেন, "এটি তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর বাড়ি। যার সঙ্গে ২০-২৫ বছর আগেই তানভীর ইমামের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বলে শুনেছি।

“বাড়িতে টাকা ও অস্ত্র আছে অভিযোগ করে আজকে ছাত্র পরিচয়ে কিছু মানুষ মিছিল নিয়ে ঢুকে পড়ে। আমরা ধারণা করছি, এর সাথে কিছু অছাত্রও ছিল।"

পুলিশ ওই বাড়িতে যাওয়ার পর তারা আবার মিছিল করতে করতে বেরিয়ে যায় জানিয়ে পরিদর্শক মোখলেছুর বলেন, “বাড়ির সবকিছু তছনছ করে ফেলা হয়েছে। আমরা আসতে আসতেই তারা তছনছ করে ফেলেছে। এখন বাড়ির কিছু খোয়া গেছে কি না বা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে নিশ্চিত হতে পারব।"

গুলশান ২ এ শাহাবুদ্দিন পার্কের পাশের ওই বাড়ির সামনে লোকজন জড়ো হয় রাত ১২টার দিকে। জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় চালক দলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খন্দকারের নেতৃত্বে তারা জড়ো হয়ে দাবি করতে থাকেন, ওই বাড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের। সেখানে ‘বিপুল অস্ত্র ও অর্থ’ লুকিয়ে রাখা হয়েছে- এমন তথ্য পাওয়ার কথা বলে জোর করে ওই বাড়িতে ঢোকেন তারা।

লোকজনের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ার দৃশ্য ফেইসবুকে সরাসরি প্রচার করেছে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন। তাতে দেখা যায়, ’আওয়ামী লীগের দালাল’ স্লোগান দিয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে পড়া লোকজন বাড়ির আলমারি, জুতার বাক্স, বিছানাপত্র সব ওলটপালট ও তছনছ করছে। এসময় সেখানে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

সেখানে ঢুকে পড়া এক তরুণ নিজেকে শাকিল আহমেদ পরিচয় দিয়ে বলেন, তারা স্থানীয় বাসিন্দা। ওই বাড়িতে ‘তানভীর ইমামের মেয়ে’ আছে যার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে– এমন খবর তাদের কাছে ছিল। বাড়িতে অনেক ‘অবৈধ জিনিসপত্র’ রয়েছে বলেও খবর ছিল তাদের কাছে।

তার দাবি, এসব খবর নিয়ে তাদের লোকজন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাছে গেলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে কিছু লোকজন মিলে নিজেরাই বাসায় তল্লাশি করতে ঢুকে পড়েছেন।

বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ও গাড়িচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, রাতে লোকজন হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু লোকজন দরজার সিটকিনি ভেঙে ঢুকে পড়ে। তারা পুরো বাড়ি তছনছ করে ফেলেছে।

তিনি বলেন, “এটা এইচ টি ইমামের বাড়ি নয়, এটা রহমান সাহেবের বাড়ি। রহমান সাহেবের মেয়ের সঙ্গে তানভীর ইমামের বিয়ে হয়েছিল অনেক আগে। ২০০১ সালের দিকে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। রহমান সাহেব ও তার স্ত্রী মারা গেছেন। তার মেয়ে এই বাড়িতে থাকেন।”

আরেক তরুণ নিজেকে পথচারী পরিচয় দিয়ে বলেন, বাসায় ঢুকে পড়া লোকজনের সঙ্গে তিনি ঢুকেছিলেন কেবল ভিডিও করতে।

সেখানে একজন নেতাগোছের ব্যক্তি সবাইকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন যিনি নিজের পরিচয় দেন জাতীয়তাবাদী চালক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খন্দকার হিসেবে।

সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে জুয়েল দাবি করেন, এখানে ‘ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারী আওয়ামী লীগের লোকজন’ লুকিয়ে আছে বলে তাদের কাছে খবর ছিল। এছাড়া বাড়িতে ‘অস্ত্র’ রয়েছে বলেও তারা জেনেছিলেন। এমন খবর শুনে তারা প্রথমে সেনাবাহিনীকে জানালে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তিনি পুলিশকে ফোন করেছিলেন। পুলিশ না আসায় তারা দেড় থেকে দুইশ ছাত্র-জনতা বাড়িতে তল্লাশি চালাতে ঢোকেন।

রাত ১টার দিকে জুয়েল বলেন, তখন পর্যন্ত তারা তল্লাশি করে কিছু পাননি।

পরে গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আল আমিন হোসাইন বলেন, "বাসায় আওয়ামী লীগের দোসর লুকিয়ে আছে এবং বাসায় টাকা ও অস্ত্র মজুদ আছে এমন অভিযোগ তুলে কিছু লোকজন বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে আমরা যাওয়ার পর তারাও নেমে যায়, সেনাবাহিনীর টিমও আসে।"

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "বাসায় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় কেয়ারটেকারসহ তিনজন ছিলেন বাসায়, বাসার মালিক ছিলেন না। তাদের কাউকে মারধর করা হয়নি।"

এ ঘটনায় জনতার মধ্যে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়