সোমবার   ১০ মার্চ ২০২৫ , ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:১৯, ৯ মার্চ ২০২৫

শিশুটিকে ধর্ষণ করেন বোনের শ্বশুর, মামলার এজাহারে অভিযোগ

শিশুটিকে ধর্ষণ করেন বোনের শ্বশুর, মামলার এজাহারে অভিযোগ

মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তাঁর বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন। তাঁরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান।

আজ শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুটির মা। সেই অনুযায়ী বেলা তিনটার দিকে মামলা রেকর্ড হয়। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪)–এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম বলেন, শিশুটি ঢাকায় চিকিৎসাধীন। মায়ের পাঠানো এজাহার অনুযায়ী মামলা হয়েছে। আগে থেকে হেফাজতে থাকা চার আসামিকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে শিশুটির বড় বোনের বিয়ে হয়। ওই বাড়িতে বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তাঁর শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি।

এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (বোনের স্বামী) দরজা খুলে দিলে তাঁর বাবা (শ্বশুর) তার মুখ চেপে ধরে তাঁর কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।

এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তাঁর মাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তাঁর স্বামী মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখেন। সকালে এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাদী হাসপাতালে যান।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভাশুর—কেউই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি। তাঁরা অসংলগ্ন ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ায় ভুক্তভোগীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

শিশুটির বড় বোন সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০ দিনের মতো আগে আমার সঙ্গে একটা ঘটনা ঘটে। সেদিন সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। আমি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যাই। টয়লেট থেকে ফিরে দেখি ঘরে আলো বন্ধ। হঠাৎ একজন আমার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমি উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে বুঝতে পারি, সে আমার শ্বশুর। বিষয়টি আমার স্বামীকে জানালে সে উল্টো আমাকে আজেবাজে কথা বলে। আমি আমার বাড়িতেও এ কথা জানাই। বাড়িতে গিয়ে আর শ্বশুরবাড়ি ফিরতে চাইনি। কিন্তু বাড়ি থেকে আমাকে বুঝিয়ে আবার পাঠানো হয়। আমার ভেতর সব সময় ভয় কাজ করত, যদি ওই ঘটনার চেয়ে খারাপ কিছু ঘটে। এ কারণে আমার সঙ্গে আমার ছোট বোনকে পাঠায়।’ তিনি আরও বলেন, তিনি এলাকার লোকজনের কাছে শুনেছেন, এর আগেও দুইটা মেয়ের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল তাঁর শ্বশুর।

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাড়ি জেলার শ্রীপুর উপজেলায়। কয়েক দিন আগে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আজ বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) পাঠানো হয়েছে।


 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়