শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪ , ৩ কার্তিক ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১ মে ২০২৪

আপডেট: ১১:৫০, ২ মে ২০২৪

বুয়েটে পরীক্ষাও হবে, আইনি লড়াইও চলবে

বুয়েটে পরীক্ষাও হবে, আইনি লড়াইও চলবে

ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত হয়ে যাওয়া টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা আগামী ১১ মে শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ। 

বুধবার বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিও) অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক আজ ও কালকে বলেন, “মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিদের দীর্ঘ আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

“১১ মে থেকে সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। আগামী সপ্তাহে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সূচি প্রকাশ করা হবে।” 

সভায় অংশ নেওয়া এক শ্রেণি প্রতিনিধি নাম না করার শর্তে বলেন, “সভায় শ্রেণি প্রতিনিধিরা ১১ মে থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা সবার একসঙ্গে হয়। তাই পরীক্ষার সময় আর কোনো ক্লাস নেই। 

“ঈদুল আজহার আগেই সব পরীক্ষা শেষ হবে। পরীক্ষা শেষে একটি টার্ম ফাইনাল ব্রেক থাকে, ব্রেক শেষে আবার ক্লাস শুরু হবে।”

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্তও হয়েছে সভায়। এক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়তে যে আইনজীবী নিয়োগ করা হবে, তা শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী হবে। 

“আমরা হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের বিষয়েও কথা বলেছি। আমরা সবকিছু ইতিবাচক হিসেবে দেখছি, শিক্ষকরা আমাদের দাবির সঙ্গে রয়েছেন,” বলেন ওই শ্রেণি প্রতিনিধি। 


বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিও) অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক বলেন, “শ্রেণি প্রতিনিধিদের প্রস্তাব করা আইনজীবীদের তালিকা থেকে একজনকে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী নিয়োগ দেবে। আইনজীবীর যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে।”

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার মধ্যে গত ২৮ মার্চ গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। 

আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ’ ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের অপসারণ। 

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর হলের সিট বাতিল করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, রাব্বীই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাগম ঘটিয়েছিলেন। 

পরে রাব্বীর রিট আবেদনে হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয় হাই কোর্ট। তার আলাদা আবেদনে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞাও স্থগিত করে উচ্চ আদালত। তাতে প্রকৌশল শিক্ষার এই বিদ্যাপীঠে ছাত্র রাজনীতি ফেরার পথ খোলে।

ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার আগে গত ১৬ এপ্রিল বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই পদে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরকৌশলের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিককে। তার পরও শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরেননি।

দেড় মাস অচলাবস্থা থাকার পর অবশেষে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরতে রাজি হয়েছেন।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়