সাত কলেজের স্থগিত পরীক্ষার নিয়ে নতুন ‘জটিলতা’
কলেজে কলেজে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের জেরে স্থগিত হয়ে যাওয়া ঢাকার সরকারি সাত কলেজের ২০২৩ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও অনার্স প্রথম বর্ষের স্থগিত পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে গোল বেধেছে অনার্স চতুর্থ বর্ষের স্থগিত হওয়া পরীক্ষার নতুন তারিখ নিয়ে। সেটি ৬ জানুয়ারি নির্ধারণ করায় আগ্রহী অনেকে নতুন ঘোষিত বিসিএসে আবেদন করা নিয়ে জটিলতায় পড়তে যাচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত নতুন সূচি অনুসারে, অনার্স চতুর্থ বর্ষের কিছু বিভাগের স্থগিত হওয়া ২৬ নভেম্বরের পরীক্ষাটি আগামী ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
অপরদিকে অনার্স প্রথম বর্ষের স্থগিত হওয়া ২৮ নভেম্বরের পরীক্ষা আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যেসব শিক্ষার্থীর অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হবে তারা ৪৭তম বিসিএসে আবেদন করতে পারবেন। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই বলা আছে। এ শর্তের কারণে আগামী ৬ জানুয়ারি স্থগিত পরীক্ষার দিন নির্ধারিত হওয়ায় সাত কলেজের আগ্রহী শিক্ষার্থীদের অনেকে এই বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করতে পারবেন না।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিত দুই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়। ঢাকার এই সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।
বিসিএস দেওয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় চতুর্থ বর্ষের তারিখ নতুন করে ভেবে দেখার কথা বলেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস পরীক্ষার আবেদন করা নিয়ে যেহেতু সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাই আমরা সাত কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের স্থগিত পরীক্ষার তারিখের বিষয়টি নিয়ে আবারও বসব।”
এ বিষয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষে শিক্ষার্থী মামুনুর রহমান হৃদয় বলেন, অনার্স চতুর্থ বর্ষের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নির্ধারিত সূচি অনুসারে ২৩ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে নতুন বিসিএসের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় অনেকে তাতে আবেদনে আগ্রহী হয়েছিলেন। তবে স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ৬ জানুয়ারি নির্ধারণ করায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ওই শর্তের কারণে ৪৭তম বিসিএসে আবেদন করতে পারবেন না।
২০২৩ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষা গত ১২ নভেম্বর শুরু হয়েছিল। এ পরীক্ষা আগামী ২ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২ জানুয়ারি শুধু অর্থনীতি, রসায়ন ও গণিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত ছিল। এ তিনটি বিষয়ে যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেই তাদের চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল।
তবে ড. মাহবুবর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জেরে ওই কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের সময় ২৫ নভেম্বর চতুর্থ বর্ষের ওই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
স্থগিত হওয়া ২৬ নভেম্বরের বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন, ইসলামিক স্টাডিজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, অর্থনীতি, মার্কেটিং, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, ভূগোল ও পরিবেশ, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, পরিসংখ্যান ও গণিত পরীক্ষা আগামী ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা এসেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিসিএসে আবেদন করার বিষয়ে পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান বলেন, “৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি আগের কয়েকটি বিসিএসের ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছিল বলে নজির আছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমন্বয়ক বা অধ্যক্ষদের কেউ বিষয়টি নিয়ে কমিশনের সঙ্গে কথা বলে সংকটের বিষয়টি জানালে কমিশন বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে।”
এ বিষয়ে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সমন্বয়ক ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, অনেক শিক্ষার্থী এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে শিগগির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
“বিসিএসের শর্তের সময় বাড়াতে পিএসসির সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে আমি অন্যান্য কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলব।”