কঙ্গনাকে চড় মারা প্রসঙ্গে কী বলছেন ঋতাভরী-পিয়া-বিদীপ্তা-সুদেষ্ণা
কৃষক আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। সেই মন্তব্য মনে রেখে দিয়েছিলেন নিরাপত্তারক্ষী কুলবিন্দর কউর। কারণ, কৃষক আন্দোলনে শামিল ছিলেন তাঁর মা-ও। চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে তল্লাশির সময়ে তাই কথা কাটাকাটির পরেই অভিনেত্রীকে চড় মারেন কুলবিন্দর। আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি নিজেই বলেন, কৃষক আন্দোলনের সময়ে কঙ্গনার একটি মন্তব্য তিনি মেনে নিতে পারেননি। বিমানবন্দরে তাঁকে দেখে তাই তাঁর মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তাই ইচ্ছা করেই কঙ্গনাকে চড় মেরেছেন তিনি।
এই ঘটনায় নেটাগরিকরা প্রায় দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। কেউ নিরাপত্তারক্ষীর কাজটিকে সমর্থন জানাচ্ছেন। কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন, কর্তব্যরত অবস্থায় কি এই কাজ করা যায়? ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার জেরে কি এমন পদক্ষেপকে 'ক্ষমতার অপব্যবহার! বলা যায় না? নেটাগরিকদের একাংশের প্রশ্ন, এক জন মহিলাকে কি এই ভাবে জনসমক্ষে মারধর করা যায়?
এই বিষয়ে আনন্দবাজার অনলাইনকে অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী জানান, মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে শারীরিক হিংসাকে সমর্থন করেন না তিনি। ঋতাভরী বলেন, ‘‘মহিলা-পুরুষ যে-ই হোন, শারীরিক ভাবে হিংসা ছড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোকে আমি সমর্থন করি না। সে যেমন প্রতিবাদই হোক না কেন, মারধরে আমি বিশ্বাস করি না। দেশে আইনকানুন এখনও আছে বলেই আমি বিশ্বাস করি।’’
কঙ্গনা এমন বহু কথাই বলেন, যা সমর্থন করেন না ঋতাভরী নিজেও। কিন্তু, গায়ে হাত তুলে প্রতিবাদ করা যায় বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলছেন, ‘‘জানি, ওই মহিলা (কুলবিন্দর কউর) রেগে আছেন। কঙ্গনা এমন অনেক কিছু করেন বা বলেন, যা আমরা মেনে নিতে পারি না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি ওঁকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করব। অপরাধের জবাব কখনও অপরাধ দিয়ে হয় না। প্রতিবাদ করার আরও অনেক ধরন আছে। কারও গায়ে হাত তুলে তা হতে পারে না। তা হলে আর গণতন্ত্রের কী রইল? ধর্ষণের জবাব তো ধর্ষণ হতে পারে না!’’
মনো-সমাজকর্মী পিয়া চক্রবর্তী অবশ্য মনে করেন, এই ঘটনার প্রসঙ্গটা ভাল করে বোঝা দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘শারীরিক বা মৌখিক হিংসা, কোনওটাই সমর্থন করা যায় না। সমর্থন বা অসমর্থনের ঊর্ধ্বে গিয়ে এই ঘটনার প্রেক্ষিতটা বোঝা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। গত দশ বছর ধরে বেড়ে ওঠা একটা রাজনৈতিক দল বিজেপি যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসেছে, সেটাই এই ঘটনার প্রেক্ষিত। কঙ্গনা এই রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র সেজে বছরের পর বছর অত্যন্ত টক্সিক কথা বলে গিয়েছেন।’’
কুলবিন্দর কউর সম্পর্কে পিয়া বলেছেন, ‘‘তিনি খেটে খাওয়া মানুষ। কৃষকদের সরাসরি অপমান করেছে কঙ্গনা। তাঁদের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলনকে অপমান করেছেন। এত দিন এই অপমান, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিরোধ করতে সরকার বা আইন কী করেছে? এই প্রশ্নটা সবার আগে করা উচিত। কঙ্গনাকে কি শাস্তি দেওয়া হয়েছে?’’
পিয়ার বক্তব্য, দিনের পর দিন কঙ্গনা তাঁর মন্তব্যের জন্য কোনও শাস্তিই পাননি। সেখান থেকেই ক্ষোভ জন্মেছে। সুবিচার না পেয়ে তাই কুলবিন্দর এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সুবিচার না পেয়েই এই পদক্ষেপ করার প্ররোচনা তৈরি হয়েছে। চড় মারার পদক্ষেপকে নিন্দা করা যায়। কিন্তু এর পিছনে যে প্রেক্ষাপট, সেটা বোঝাও দরকার। কুলবিন্দরের প্রতি সহমর্মিতা থাকা উচিত। শারীরিক হিংসা সমর্থন না করলেও আমার ওঁর জন্য সহমর্মিতা রয়েছে।’’
এই প্রসঙ্গে পরিচালক সুদেষ্ণা রায় জানিয়েছেন, তিনি কোনও রকমের হিংসাকে সমর্থন করেন না। তবে কঙ্গনা রানাউত যে সব মন্তব্য করেন, তা-ও তিনি মেনে নেন না। তাঁর কথায়, ‘‘কঙ্গনা রানাউত যে ভাবে সবাইকে তাচ্ছিল্য করেন এবং নিচু চোখে দেখেন, তার জন্য ওই মহিলার (কুলবিন্দর) এটা মনে হতেই পারে। নিশ্চয়ই ওঁরও খারাপ লেগেছিল। কঙ্গনা নিজে মহিলা মানেই তিনি নির্দোষ, এমন নয়। তিনি নিজেও মহিলাদের ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আমি হিংসায় বিশ্বাস করি না বলে চড় মারাকে সমর্থন করি না। কিন্তু ওই মহিলা আজ যদি গালিগালাজও করতেন, তা-ও বিতর্ক তৈরি হত।’’
সুদেষ্ণার মতে, কঙ্গনা নিজে একাধিক বার মানুষকে নিজের কথার মাধ্যমে আঘাত করেছেন। আর তার জেরে এমন প্রতিক্রিয়া অনেকের মধ্যেই তৈরি হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘তবে আবেগটাও সংযত রাখতে হবে। কর্তব্যরত অবস্থায় এই কাজ করা উচিত হয়নি বলেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হল। আবেগের দিক থেকে দেখতে গেলে বোঝা যাবে, কঙ্গনার প্রতি মানুষের বিদ্বেষটাই এখানে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এক জন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে আমি মনে করি, এটা হয়তো সঠিক ধরন নয়। বিশেষ করে তিনি কর্তব্যরত ছিলেন বলেই।’’
অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী কঙ্গনাকে চড় মারার ঘটনা সমর্থন করছেন না। তিনি মনে করছেন, কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে এই কাজটা করা যায় না। তিনি বলেন, ‘‘কঙ্গনার কাজকর্ম কারও খারাপ লাগতে পারে, কারও ভাল লাগতে পারে। কঙ্গনা বিগত দিনে সমাজমাধ্যমে অশিক্ষিতের মতো যে সব কথা বলেছেন, তাতে আমার মতো অনেকেই ওঁর উপর বিরক্ত। কিন্তু তাই বলে গায়ে হাত তোলা ঠিক নয়। আমার খুব অপছন্দের একটা লোক কোথাও চড় খেলে হয়তো আমার ভাল লাগবে। কিন্তু কর্তব্যরত অবস্থায় একজন কর্মী কারও গায়ে এই ভাবে হাত তুলতে পারেন না। এটা সমর্থনযোগ্য নয়।’’ এমন হলে, যে কেউ যে কোনও মানুষের গায়ে হাত তুলতে পারে। এমনই মনে করছেন বিদীপ্তা।