মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ২৪ আগস্ট ২০২৪

আপডেট: ১৯:৩০, ২৪ আগস্ট ২০২৪

নারীদের জোরে কথা বলা, অপরিচিত পুরুষের দিকে তাকানো নিষেধ: আফগান সরকার

নারীদের জোরে কথা বলা, অপরিচিত পুরুষের দিকে তাকানো নিষেধ: আফগান সরকার

অপরিচিত পুরুষদের দিকে তাকানোর ক্ষেত্রেও নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাল তালিবান সরকার। আফগানিস্তানের মহিলারা জনসমক্ষে বা বাড়ির ভিতরে জোরে কথা বলতে পারবেন না বলেও নিয়ম চালু করেছে তালিবরা। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, তালিবান সরকার এই বিষয়ে ১১৪ পাতার আদেশনামা দিয়েছে।

নতুন সেই নিয়মে লেখা, ‘‘কোনও ভাবেই অপরিচিত পুরুষদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবেন না আফগানিস্তানের প্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা।’’ অপরিচিত বলতে স্বামী বা আত্মীয় নন এমন পুরুষদের বোঝানো হয়েছে। মহিলারা যাতে অপরিচিত পুরুষদের দিকে তাকিয়ে ‘উত্তেজিত না হয়ে পড়েন’ বা অন্যদের ‘উত্তেজিত না করে দেন’, তার জন্যই নাকি এই নিদান।

পাশাপাশি, আফগান নারীদের জন্য নির্দেশ, তাঁরা বাড়ির ভিতরে কথা বললে সেই আওয়াজ যেন বাড়ির বাইরে শোনা না যায়।

জনসমক্ষে এক জন মহিলার শরীর সর্ব ক্ষণ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক বলেও উল্লেখ রয়েছে নতুন তালিবানি নিয়মে। নতুন নিয়ম বলছে, ‘‘যদি মহিলাদের বাড়ি থেকে বাইরে বেরোতেই হয়, তা হলে তাঁদের অবশ্যই পুরুষদের থেকে নিজেদের মুখ এবং কণ্ঠস্বর লুকিয়ে রাখতে হবে।’’ পাশাপাশি উল্লেখ রয়েছে, মহিলারা যে পোশাক পরবেন তা যেন কোনও ভাবেই পাতলা না হয়। পোশাক হবে না ছোট বা আঁটসাঁট।

নারী অধিকার নিয়ে তালিবদের নয়া নিয়মে মহিলাদের প্রকাশ্যে গান গাওয়া বা কোরান পাঠেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

চালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হিজাববিহীন বা সঙ্গে পুরুষ নেই এমন মহিলাদের যেন কোনও ভাবেই ট্যাক্সিতে না চাপানো হয়। গাড়িতে গান বাজানো এবং পুরুষদের সঙ্গে মহিলাদের মেলামেশাতেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

যে মহিলারা নতুন নিয়ম অমান্য করবেন, তাঁদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হবে বলেও কড়া নির্দেশ তালিবান সরকারের।

নতুন এই নিয়ম আফগান মহিলাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, নারী অধিকারের উপরে তালিবান সরকারের নিষেধাজ্ঞাই আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক মূলস্রোতে শামিল হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জয়নাব নামে কাবুলের বাসিন্দা এক মহিলা  বৃটিশ গণমাধ্যম দি টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির সঙ্গে তালিবানের যোগাযোগের কারণেই তারা আফগান নারীদের আরও দমন করতে পারছে।’’

জয়নাব আরও বলেন, ‘‘তালিবানরা ক্ষমতায় থাকা মৌলবাদী, যারা নারীদের অস্তিত্ব স্বীকার করতে নারাজ।’’ আফগানিস্তান একটি ‘বিশাল খাঁচা’য় পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

নারীদের পাশাপাশি তালিবদের নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়েছেন আফগান পুরুষেরাও। আফগান পুরুষদেরও জনসমক্ষে মহিলাদের মুখের দিকে তাকানো এবং আঁটসাঁট পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে খেলাধুলার সময়েও পুরুষেরা ছোট পোশাক পরতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে। পুরুষদের দাড়ি কাটার উপরও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে পুনরায় ক্ষমতা দখলের ন’মাসের মাথায়, ২০২২ সালের মার্চে আচমকা মেয়েদের হাইস্কুল এবং কলেজে যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল তালিবান। আমেরিকা-সহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই তার প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

তালিবান মন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হক্কানি সে সময়ে জানিয়েছিলেন, তাঁদের সরকার মোটেও নারীশিক্ষার বিরোধী নয়। কিন্তু পোশাকবিধি-সহ বেশ কিছু দিকে নজর দেওয়ার উদ্দেশ্যে কয়েক মাস মেয়েদের পঠনপাঠন বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে কার্যত মধ্য ও উচ্চশিক্ষার দরজা খোলেনি মেয়েদের সামনে।

সম্প্রতি ইউনেস্কোর একটি রিপোর্টে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে, তালিবানের কড়াকড়ির কারণে গত তিন বছরে আফগানিস্তানের অন্তত ১৪ লক্ষ শিশুকন্যা স্কুলশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

২০২১ সালের ১৫ অগস্ট ক্ষমতা দখলের পর মেয়েদের শিক্ষার অধিকার সুরক্ষিত রাখার যে প্রতিশ্রুতি মৌলানা আখুন্দজ়াদার বাহিনী দিয়েছিল, তা পালিত হয়নি বলে জানাচ্ছে ওই রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য।

রিপোর্ট বলছে, আফগানিস্তানে মেয়েরা এখন শুধু প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। সেখানেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত কমছে! এর ফলে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনেস্কো। তার মধ্যেই আবার আফগান মহিলাদের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞার খাঁড়া নেমেছে

সর্বশেষ

জনপ্রিয়