‘ভারত হটাও’ নীতি বাদ দিয়ে দিল্লিতে মুইজ্জু, ৪০ কোটি ডলার দিচ্ছে ভারত
‘ভারত হটাও’ নীতি নিয়ে ক্ষমতায় বসার কিছুদিনের মধ্যেই ভুল বুঝতে পেরেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। শীতল হওয়া সম্পর্ককে আগের জায়গায় ফেরানোর জন্য দিল্লি সফর করছেন মালদ্বীপের সরকারপ্রধান। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার বৈঠকের পর আর্থিক সংকটে থাকা মালদ্বীপকে ৪০ কোটি ডলার অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে ভারত সরকার।
ওই বৈঠকের পর দুদেশের মধ্যে ‘সমন্বিত অর্থনৈতিক ও সমুদ্র নিরাপত্তা অংশীদারত্বের অভিষ্ট’ ঘোষণা করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ।
দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৪০ কোটি ডলারের সহায়তা এবং তিন হাজার কোটি রুপির দ্বিপক্ষীয় ‘কারেন্সি সোয়াপ’ এগ্রিমেন্টের চুক্তির জন্য ভারত সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু; যা মালদ্বীপের চলমান আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মালদ্বীপকে সহযোগিতার বিষয়ে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে দুই নেতা একমত হয়েছেন।”
এর আগে মে ও সেপ্টেম্বর মাসে মালদ্বীপকে ট্রেজারি বিলে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) ১০ কোটি ডলারের সহায়তার জন্যও ভারতকে ধন্যবাদ দেন মুইজ্জু।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুইজ্জু দায়িত্ব নেন গত বছরের নভেম্বরে। নির্বাচনি প্রচারে জনগণের কাছে মুইজ্জুর মূল অঙ্গীকার ছিল- ‘ভারত হটাও’ নীতি। মূলত মালদ্বীপের ওপর ভারতের প্রভাব কমানোই ছিল তার লক্ষ্য।
সে কারণে মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন চলে আসছিল।
চীনপন্থি হিসাবে পরিচিত মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর বেইজিংয়েও গিয়েছিলেন। তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একাধিক ‘বিতর্ক’ তৈরি হয়, যার প্রভাব পড়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে।
এরমধ্যে ঋণখেলাপি হওয়ার শঙ্কায় পড়ে মালদ্বীপ। সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪৪ কোটি মার্কিন ডলারে নেমে আসে। এ অর্থ দিয়ে দেশটির মাত্র দেড় মাসের আমদানির খরচ মেটানো সম্ভব।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর লাক্ষাদ্বীপ সফরের ছবি নিয়ে মুইজ্জুর মন্ত্রীদের ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মালদ্বীপ বয়কট’-এর ডাক ওঠে। বলিউডের বহু তারকাও সমর্থন দিয়েছিলেন তাতে।
ওই সময়ে মালদ্বীপের অসংখ্য টিকেট বাতিল করেন ভারতের পর্যটকরা। মালদ্বীপের অর্থনীতির অন্যতম ভিত পর্যটন। ভারতীয় পর্যটকেরা মুখ ফেরাতে শুরু করায় বেশ সমস্যায় পড়েছিল মালদ্বীপ। মাঝে মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা সরিয়ে নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিল মুইজ্জু সরকার।
আর এখন মুইজ্জুর ভারত সফর এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে, মালদ্বীপ তার বড় এই প্রতিবেশী দেশটিকে উপেক্ষা করে চলতে পারে না। তাই এবার সম্পর্ক মসৃণ করতে সচেষ্ট হয়েছে মালদ্বীপ।
রোববার পাঁচ দিনের সফরে দিল্লী পৌঁছানোর পর সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন মোহাম্মদ মুইজ্জু। বৈঠক শেষে দুদেশের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দুই সরকারপ্রধান ‘ঐতিহাসিকভাবে নিবিড় ও বিশেষ সম্পর্ককে’ গভীর করার জন্য পুরো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করেছেন। যে সম্পর্ক দুদেশের জনগণের উপকারের ক্ষেত্রে বড় রকমের অবদান রেখেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘প্রতিবেশী প্রথম’ ও ‘ভিশন সাগর’ নীতির আওতায় মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত যে গুরুত্ব দেয়, তা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মালদ্বীপের উন্নয়ন যাত্রা ও অগ্রাধিকারের সহায়তার ক্ষেত্রে ভারতের অবিচল প্রতিশ্রুতির কথাও পুনরায় তুলে ধরেছেন তিনি।
ভারত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ মালদ্বীপের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার’ হিসাবে মালদ্বীপের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী অভিজ্ঞতা বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং যৌথ সহযোগিতার পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারত কাজ করবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ভারতীয় সহযোগিতার মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের (এমএনডিএফ) ‘একাথা’ পোতাশ্রয় প্রকল্প চালু হলে, তা এমএনডিএফ-এর অপরাশেন সংক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। সময়মত এটার সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত হয়েছেন দুই সরকার প্রধান।
বিবৃতিতে বলা হয়, মালেতে ভারতের সহযোগিতায় নির্মিত মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভবন উদ্বোধনের বিষয়েও মোদী ও মুইজ্জু একমত হয়েছেন।