শক্ত হচ্ছে ট্রাম্পের অবস্থান, উদ্বিগ্ন ডেমোক্র্যাটরা
শিকাগোতে দুই মাস আগে ডেমোক্র্যাট পার্টির এক জাতীয় সম্মেলনে কমলা হ্যারিসকে দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়। তখন সেখানে উপস্থিত হাজার হাজার দলীয় কর্মীর কাছে তিনি ছিলেন ত্রাণকর্তা।
কারণ হ্যারিস ৮১ বছরের বুড়ো প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সরিয়ে দলটির প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনে বাইডেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন না, এমন বিশ্বাস তখন সবার মধ্যে জেঁকে বসেছিল। হ্যারিস প্রার্থী হওয়ায় তারা হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন।
কিন্তু তারপরও দলটির জ্যেষ্ঠ কৌশলবিদরা কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাদের মনে হচ্ছিল, তাদের দলের কর্মী-সমর্থকরা হ্যারিসের জয় নিয়ে অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছেন। এখন নির্বাচন কাছে চলে আসার পর তাদের উদ্বেগ সত্য বলে মনে হচ্ছে এবং আর তা ডেমোক্র্যাট শিবিরে দুশ্চিন্তার ছায়া ফেলেছে।
হ্যারিস প্রার্থী হওয়ার পর পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়। জনমত জরিপে বাইডেন যেখানে ট্রাম্পের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলেন সেখানে হ্যারিস তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে দেন। এখন এটা অনেকটা পরিষ্কার, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে যারা বাইডেনকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তাদের সবার মন জয় করেছেন হ্যারিস।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে শুধু নিজ দলের কর্মী-সমর্থকদের মন জয় করলেই হবে না, যেতে হবে আরও অনেকদূর- হ্যারিসকে সাধারণ ভোটারদেরও মন জয় করতে হবে। পাশাপাশি ২০২০ সালে যাদের সমর্থন বাইডেনকে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল সেই পরস্পরবিরোধী ভঙ্গুর জোটও ধরে রাখতে হবে তাকে।
সর্বশেষ জরিপগুলোতে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান কমে এসেছে আর এখন জনসমর্থন প্রায় সমান সমান অবস্থায় আছে।
ডেমোক্র্যাটদের জন্য যা উদ্বেগের তা হল তথাকথিত ‘ব্লু ওয়াল’ রাজ্য ট্রাম্পের জনসমর্থন বাড়ছে। মিশিগান, উইসকনসিন ও পেনসিলভ্যানিয়া- এই রাজ্যগুলো এবং কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিনো ভোটাররা হ্যারিসকে জয়ের পথে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কিছু জটিলতার আভাস পাওয়া গেছে।
দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা হবে বলে ধারণা যাচ্ছে। জরিপে ব্যবধান কমে আসার পর ট্রাম্পকে নিয়ে হ্যারিসের সমালোচনা ক্রমেই কঠোর হয়ে উঠছে। গত কয়েকদিনে ট্রাম্পকে তিনি ‘ফ্যাসিস্ট’, ‘অস্থিরমতি’ বলে চিহ্নিত করেছেন। ভোটারদের ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ‘বিপজ্জনক পরিণতির’ বিষয়ে সতর্ক করছেন।
জনমত জরিপগুলো থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, নির্বাচনে হ্যারিস সম্ভবত পপুলার ভোট বেশি পাবেন। কিন্তু জয় পেতে হলে তাকে ইলেকটোরাল কলেজে জয়ী হতে হবে আর তা করতে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর সমর্থন তাকে অবশ্যই পেতে হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, এসব অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে মিশিগানে তিন লাখ আরব-আমেরিকান ভোটার গাজা ও লেবাননের যুদ্ধ নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। তারা বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে হ্যারিসকেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানানো নিয়ে সমান দায়ী বলে বিবেচনা করছেন।
তাদের অনেক কোনো প্রার্থীকেই ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ সরাসরি ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতা করে তাদের শাস্তি দিতে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত পেনসিলভ্যানিয়ার বহু ভোটার উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের ওপর বিরক্ত। শ্রমিক শ্রেণির ভোটাররা যারা এমনিতে ডেমোক্র্যাট সমর্থক তারাও এবার অন্য সুরে কথা বলছেন।
তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন খাদ্য ও পেট্রলের দাম বর্তমানের চেয়ে অনেক কম ছিল। তাই তারা সবাই ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।
তাদের ধারণা দোদুল্যমান হিসেবে পরিচিত এর অঙ্গরাজ্যটি ধীরে ধীরে ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। যদি তাদের এ ধারণা সত্যি হয় তাহলে ৫ নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।