বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

প্রকাশিত: ১১:১০, ৮ নভেম্বর ২০২৪

চেয়ারে বসে সবার আগে যেসব কাজ করবেন ট্রাম্প

চেয়ারে বসে সবার আগে যেসব কাজ করবেন ট্রাম্প

অভিবাসন, অর্থনীতি ও ইউক্রেইন যুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোয়াইট হাউজে ফিরতে যাচ্ছেন রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প।

বিজয়ী ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “আমি একটি সাধারণ নীতি অনুসরণ করে দেশ পরিচালনা করব: প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়েছে। আগামীতেও আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করব।”

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি কীভাবে তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন সে সম্পর্কে খুব কমই বিশদ বিবরণ দিয়েছেন।


১) অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন: ট্রাম্প এবছর নির্বাচনী প্রচারের সময় অভিবাসী ইস্যুতে তার অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। তিনি ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গণহারে অভিবাসী বিতাড়নের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি’ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজও শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নিয়েই এই সীমান্ত দেয়াল তোলার কাজ শুরু করেছিলেন ট্রাম্প।

বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সময় গত বছরের শেষদিকে দক্ষিণ সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী প্রবেশের সংখ্যা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

বিশেষজ্ঞরা বিবিসি-কে বলেছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। কারণ, এটি করতে গেলে বিশাল আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে।


২) অর্থনীতি, কর ও শুল্ক: বুথ ফেরত তথ্য বলছে, ভোটারদের কাছে অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ট্রাম্প মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে মূহুর্তের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষমতা সীমিত।

এছাড়া ব্যাপক কর হ্রাসের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে অধিকাংশ বিদেশি পণ্যের ওপর অন্তত ১০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, চীন থেকে আমদানিকৃত পন্যে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

কিছু অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপে পণ্যের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের জন্য তা ক্ষতিকর হবে।

৩) জলবায়ু নীতি: প্রথম প্রেসিডেন্সির সময়ে পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত নানা উদ্যোগ থেকে সরে এসেছিলেন ট্রাম্প। ওই সময় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকেও সরে যাওয়া প্রথম দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

এবারও তিনি পরিবেশ সংক্রান্ত আইন শিথিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশেষত, আমেরিকার গাড়ি শিল্পকে সহায়তা করতে তিনি এ উদ্যোগ নিতে চলেছেন। বাইডেন সরকার পরিবেশবান্ধব গাড়ি শিল্পের বিষয়ে বিষয়ে যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল, তা বাতিল করার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আর্কটিক অঞ্চলের মতো জায়গাগুলোতে তেল উত্তোলনের অনুমতি দিতে চান। তার মতে, এ বিষয়টি জ্বালানির দাম কমাতে সহায়ক হবে, যদিও বিশ্লেষকরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।

৪) ইউক্রেইন যুদ্ধের অবসান: রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেইনকে সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্র যে হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে তার সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। আলোচনার মাধ্যমে '২৪ ঘণ্টার মধ্যে' সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু ঠিক কীভাবে এত কম সময়ে তিনি তা বাস্তবায়ন করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে ডেমোক্র্যাটদের বক্তব্য, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আরও উৎসাহ দেবে।

ট্রাম্প চান, বৈদেশিক সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন থাকুক। গাজা যুদ্ধে ট্রাম্প নিজেকে ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক দাবি করেছেন। তবে ইসরায়েলকে অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি লেবাননে সহিংসতা বন্ধের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন, তবে কীভাবে তা করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

৫) গর্ভপাত ইস্যু: ট্রাম্প তার কিছু সমর্থকের আপত্তি থাকার পরও প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে কমলা হ্যারিসের বিপরীতে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে জাতীয়ভাবে গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আইনে স্বাক্ষর করবেন না।

২০২২ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট নারীদের গর্ভপাতের সংবিধানিক অধিকার বাতিল করে।

গর্ভপাতের অধিকার ছিল কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি প্রচারের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।নির্বাচনের দিন কিছু রাজ্য গর্ভপাতের অধিকারের সুরক্ষা এবং তা বাড়ানোর জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ অনুমোদন করেছিল।

ট্রাম্প নিজে বারবার বলেছেন, গর্ভপাত নিয়ে রাজ্যগুলোর নিজেদের আইন করার স্বাধীনতা থাকা উচিত।তবে গর্ভপাত নিয়ে নিজস্বভাবে একটি নির্ভরযোগ্য বার্তা দিতে তিনি হিমশিম খেয়েছেন।

৬) ৬ জানুয়ারির কিছু দাঙ্গাকারীকে ক্ষমা: ট্রাম্প বলেছেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে দাঙ্গার সময় অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত কয়েকজনকে "মুক্ত" করবেন তিনি। গত নির্বাচনে ট্রাম্পের হতাশাজনক পরাজয়ের পরে তার সমর্থকরা ফল জালিয়াতির অভিযোগে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলা চালিয়েছিল।

হামলা-সহিংসতায় কয়েকজনের মৃত্যুর জন্য ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হয়। ট্রাম্প এ হামলায় উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছিল।

দাঙ্গার মতো এমন একটি গুরুতর বিষয়কে ট্রাম্প খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন এবং রাজবন্দি হিসাবে দোষী সাব্যস্ত শত শত বন্দিকে পুনরায় সংগঠিত করেছিলেন।

তিনি বার বারই বলে এসেছেন, তার এই সমর্থকদের অনেককেই অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল- এমন হয়েও থাকতে পারে।

৭) বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথকে বরখাস্ত করা: ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছেন মার্কিন স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়া ও সরকারি গোপন নথি অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। ক্ষমতা নেওয়া মাত্র জ্যাককে চাকরিচ্যুত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, “আমি দুই সেকেন্ডেই তাকে চাকরিচ্যুত করতে পারি।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়