মানবদেহের সম্পূর্ণ ম্যাপ তৈরি হচ্ছে, মিলবে নানা রোগের সমাধান
মানবদেহের প্রতিটি কোষের পরিচয় ও অবস্থান জানার জন্য তৈরি হচ্ছে ‘হিউম্যান সেল অ্যাটলাস’। এটি ক্যান্সার, অটো-ইমিউন রোগ, ভাইরাসজনিত জটিল অসুখসহ নানা রোগের সমাধানে নতুন পথ খুলে দেবে।
‘হিউম্যান সেল অ্যাটলাস’ হলো এমন একটি প্রকল্প, যেখানে মানবদেহের প্রতিটি কোষের পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক সারা টাইকম্যান এবং আভিভ রেঘেভ। তারা বিশ্বজুড়ে ৩ হাজার বিজ্ঞানীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন, যার মধ্যে ১৩৯ জন ভারতীয় বিজ্ঞানীও রয়েছেন।
মানবদেহে প্রায় ৩৭ লক্ষ কোটি কোষ রয়েছে।
প্রতিটি কোষের নির্দিষ্ট চরিত্র ও কাজ রয়েছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো কোষগুলো কিভাবে কাজ করে, কী কী জিন সক্রিয় থাকে এবং তাদের অবস্থান কিভাবে দেহের কার্যক্রম প্রভাবিত করে তা জানা।
মানবদেহের জটিল রোগ যেমন ক্যান্সার বা অটো-ইমিউন রোগ নিরাময় করতে হলে কোষের অভ্যন্তরীণ গঠন এবং তাদের কাজ বুঝতে হবে।
সারা টাইকম্যানের মতে, প্রতিটি কোষে থাকা ২৫ হাজার জিনের মধ্যে কোনটি সক্রিয়, সেটি নির্ধারণ করে কোষের কাজ। পেশি কোষ, স্নায়ু কোষ বা হৃৎপিণ্ডের কোষে আলাদা জিন সক্রিয় থাকে।
একটি কোষ টিস্যুর ভেতরে কোথায় রয়েছে, তা জানলে বোঝা যায় সেই টিস্যু কী কাজ করবে। এই প্রকল্পে প্রযুক্তির সাহায্যে কোষের এই দুই বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ২০০৯ সালের একটি নতুন প্রযুক্তি, যা ‘সিঙ্গল সেল জিনোমিক্স’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা একটি কোষের অভ্যন্তরের সক্রিয় জিনের সিকোয়েন্স জানতে পারেন। একই সঙ্গে প্রতিটি কোষের ধরন এবং কাজ নির্ধারণ করতে পারেন।
পরে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় ‘স্পেশাল ট্রান্সক্রিপটোমিকস’। এটি কোষের অবস্থান নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। এই প্রযুক্তির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যুক্ত হওয়ায় কাজের গতি বহুগুণ বেড়েছে।
৩৭ লক্ষ কোটি কোষ নিয়ে কাজ করা মোটেই সহজ নয়। প্রতিটি কোষের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে হলে প্রয়োজন, বিশাল পরিমাণ তথ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা, কোষের অবস্থান এবং কাজ একত্রে বোঝা, বৈশ্বিক সমন্বয়, কারণ এটি একটি বিশাল প্রকল্প।
বিজ্ঞানীরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম তৈরি করেছেন। এতে সারা বিশ্বের গবেষকরা একত্রে কাজ করছেন।
‘হিউম্যান সেল অ্যাটলাস’ প্রকল্পটি ক্যান্সারসহ জটিল রোগের চিকিৎসায় নতুন পথ দেখাবে। বাতলে দেবে ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ তৈরির পথ। এ ছাড়া অটো-ইমিউন রোগের কার্যকারণ বুঝতে সাহায্য করবে এবং মানবদেহের টিস্যু এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ আরো গভীরভাবে বুঝতে দেবে।