মেসেজ বোর্ড ফর লিডার্স: জনগণের সঙ্গে চীন সরকারের ব্যতিক্রমী সেতুবন্ধন
চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কিকিহার শহরে নগরবাসীর যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য অভিনব এক উপায় উদ্ভাবন করেছেন কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে মেসেজ বোর্ড ফর লিডার্স নামে একটি বোর্ডে এলাকাবাসী তাদের যাবতীয় সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেগুলো দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেসব সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করেন।
চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কিকিহার শহরের ‘কালচার হোম কমিউনিটির’ একটি ভবনে থাকেন জিন, যার ঘরের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ত।
নিজের চেষ্টায় সমাধান করতে না পেরে সমস্যার কথা লিখে পাঠান ‘মেসেজ বোর্ড ফর লিডার্স’-এ।
সেখান থেকে বার্তা পেয়ে তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগে নেয় স্থানীয় বাইকুয়ান কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। শুরুতে তারা প্রকৌশলীদের পাঠিয়ে সমস্যা সম্পর্কে ধারণা নেয় এবং এরপর গঠন করা হয় একটি যৌথ কমিটি। সেখানে রাখা হয় স্থানীয় হাউজিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ব্যুরো, প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট অফিস, ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড ড্রেনেজ অফিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কারিগরি ও পেশাদার ব্যক্তিদের।
তিন দিনের মাথায় জিনের সমস্যার সমাধান করা হয়। আর মেরামতের সময় প্রতিবেশীদের যেন চলাচলের অসুবিধা না হয়, সেজন্য তৈরি করা হয় বিকল্প রাস্তা।
শুধু ঘরের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়া কিংবা ভাঙা সড়ক মেরামতই নয়, পোষা পাখির বিষ্ঠা নিয়ে যন্ত্রণা আর বেতন বকেয়া পড়ার মত বিষয়গুলোর সমাধান চেয়ে লেখা যায় ‘লিডার্স বোর্ডে’।
মানুষের নানা সমস্যা ও জটিলতা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয় ‘মেসেজ বোর্ড ফর লিডার্স’। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের মূল কাজটি করছে ক্ষমতাসীন পিপলস পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলি।
সম্প্রতি বেইজিং সফরে যাওয়া বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছে এই উদ্যোগের নানা দিক তুলে ধরেন পিপলস ডেইলির একজন মুখপাত্র।
তিনি বলেন, অনলাইন ওই প্ল্যাটফর্মে নাগরিকদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষ সংযুক্ত থাকেন। কোনো নাগরিক সমস্যার কথা তুলে ধরার সময় এখানে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা সরকারি কার্যালয়কে বাছাই করে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
অনলাইনেই কর্তৃপক্ষ সমস্যার কথা জানতে পারে। জানার পরেই তারা নিজেদের কাজ শুরু করে দেয়। সমাধানের প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেটাও অনলাইনে দেখার সুযোগ রয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, ২০০৬ সালে চালুর পর থেকে এখানে যুক্ত হয়েছেন ৯১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৭ জন। এদের বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যুক্ত আছেন ২০ হাজার ৭৬২ জন।
গত দেড় যুগে প্রায় ৬০ লাখ তাৎক্ষণিক বার্তা পেয়েছে পিপলস ডেইলি। যার মধ্যে প্রায় ৫১ লাখ বার্তা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
বেইজিংয়ে পিপলস ডেইলির কার্যালয়ে একটি ডিজিটাল বোর্ডে নাগরিকদের বার্তা এবং তাদের প্রতিউত্তরের পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়। সুনির্দিষ্ট বিভাগ এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
সাংহাইয়ের চাংগিং ব্রাঞ্চ রোডের অবসরপ্রাপ্ত নারী মো লি ভীষণ যন্ত্রণায় পড়েছিলেন তার পোষা ঘুঘুর বাসায় জমা বিষ্ঠার সরানো নিয়ে। সমাধান না পেয়ে শ্বাসকষ্টেও ভোগা শুরু করেন তিনি।
উপায় না পেয়ে ‘মেসেজ বোর্ড ফর লিডার্স’-এর দ্বারস্থ হন মো। সেখান থেকে বার্তা পেয়ে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ তা ঠিকঠাক করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
পিপলস ডেইলি বলছে, তাদের এই উদ্যোগ জনগণের সঙ্গে সরকারের ব্যতিক্রমী সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। এখানে লেখার পাশাপাশি হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার ব্যবস্থাও আছে।
কোনো পিটিশন বা তদবিরে পয়সা খরচের প্রয়োজন নেই, সরকারি কর্মচারী আর জনগণের মধ্যে দূরত্ব কেবল একটি ক্লিকের।
তাদের এক মুখপাত্র বলেন, “শুধু মানুষের সমস্যা সমাধান নয়, এখানকার আগ্রহোদ্দীক অনেক ঘটনা সংবাদের উৎস হিসেবে কাজ করে।”