বৃহস্পতিবার   ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ , ২৬ পৌষ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১১:৪০, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

চীন ভারত নিরব, মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ

চীন ভারত নিরব, মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ

মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে হটিয়ে বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। ওই অঞ্চলের বিদেশী বিনিয়োগ, ব্যবসা ও প্রকল্পের সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই গত ৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসে জান্তা সরকারের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠায় বাংলাদেশ। অথচ এ সৌজন্যতা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে দেশটির প্রতিবেশী চীন, ভারত ও থাইল্যান্ড।

জান্তাকে অস্ত্র ও যুদ্ধবিমান সরবরাহকারী প্রধান দেশ চীন ও রাশিয়া। এর পাশাপাশি দেশ দুটি জাতিসংঘে মিয়ানমারকে কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে থাকে। কিন্তু জান্তার এ দুই প্রধান মিত্রের মধ্যে কেবল রাশিয়া স্বাধীনতা দিবসে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছে। বিরত থেকেছে প্রতিবেশী চীন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটি মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করে। তখন থেকেই মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে অভিনন্দন বার্তা পাঠাচ্ছে না দেশটি।

এদিকে মিয়ানমারের অন্য একটি বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতও অভিনন্দন বার্তা পাঠানো থেকে বিরত থেকেছে। একইভাবে প্রতিবেশী অন্য দুটি দেশ থাইল্যান্ড ও লাওসের পক্ষ থেকেও ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসে অভিনন্দন পাঠানো হয়নি। কেবল বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই মিয়ানমারকে অভিনন্দন বার্তা পাঠানো হয়েছে। 

জান্তা মিডিয়ার তথ্যমতে, বাংলাদেশ ছাড়াও স্বাধীনতা দিবসে অভিনন্দন বার্তা পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, বেলারুশ, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া, আলজেরিয়া, নেপাল ও কম্বোডিয়া।

বার্তা পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিত কূটনীতি চর্চার অংশ হিসেবেই এ শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হয়েছে।’

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমানে যেহেতু রাখাইন সীমান্তে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর কোনো কর্তৃত্ব নেই; আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে; তাই এ গোষ্ঠীটির সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যৎ। রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পায় সে জন্য সেখানকার ছায়া সরকার-এনইউজি এবং আরাকান আর্মির সায় রয়েছে। সে জন্য আরাকান আর্মিকে পাশ কাটিয়ে কোনোকিছু করা উচিত হবে না। তাছাড়া চীন ও ভারত এখানে কী ভূমিকা রাখছে সে বিষয়টিও নজরে রাখা জরুরি। আবার মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে পরাশক্তির দেশগুলোও এনইউজিকে সহায়তা করছে। এসব বিষয়কে চিন্তা করেই বাংলাদেশকে সামনে এগোতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে অভিনন্দন বার্তা পাঠানোকে কূটনৈতিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এখনো আছে। এর ফলে এ অভিনন্দন বার্তা পাঠানোতে কোনো সমস্যা দেখছি না। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের মূল সংকট হলো রোহিঙ্গা এবং কূটনৈতিক ইস্যুতে। এ দুটি বিষয়ে বৈশ্বিক কিংবা দ্বিপক্ষীয় উভয়ভাবেই বিগত সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। একটি নির্বাচিত সরকারের পক্ষে এ সংকটগুলো সমাধান করা সম্ভব।’

সম্প্রতি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। সর্বশেষ রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের শেষ জান্তা ঘাঁটিটিরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা বৈশ্বিক কিংবা দ্বিপক্ষীয় কোনোভাবেই সমাধান হয়নি। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এখনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। গত ২৩ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) জানান, গত দেড় থেকে দুই বছরে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। শুধু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭২ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়