ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ পেতে দ্রুত চুক্তি করতে চান ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে বলেছিলেন, নিরবচ্ছিন্ন মার্কিন সহায়তা পেতে চাইলে ৫০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিরল খনিজ ওয়াশিংটনকে দিতে হবে। এই কথা যে কেবল কথার কথা ছিল না, সেটি বুঝিয়ে দিতে যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চান ট্রাম্প। ট্রাম্প প্রশাসনের ইচ্ছা, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের কতটুকু মালিকানা পাবে সেটি এখনই নির্ধারিত না করলেও হবে তবে চুক্তি হওয়া চাই। প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির বরাতে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ৫০ শতাংশ চেয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে—গ্রাফাইট, ইউরেনিয়াম, টাইটানিয়াম ও লিথিয়াম। এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তখন ট্রাম্প জেলেনস্কির সমালোচনা করে বলেন, ‘আমাদের বিরল খনিজ এবং অন্যান্য বিষয়ের ভিত্তিতে একটি চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু তারা সেটি ভেঙেছে।’
রয়টার্স সূত্রগুলোর বরাতে জানায়, ট্রাম্প মার্কিন জনগণকে দেখাতে চান, যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেওয়া সহায়তার অর্থ পুনরুদ্ধার করছে। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে পৌঁছাতে সময় লাগবে।
তবে এই চুক্তির ব্যাপারে মন্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেয়নি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদিত করতে চান, যা তিনি হয়তো কিয়েভের জন্য আরও মার্কিন সামরিক সহায়তা অনুমোদনের আগে কিংবা ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আগে সম্পন্ন করতে পারেন, যাতে তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটে।
ট্রাম্পের ইউক্রেনবিষয়ক দূত কিথ কেলোগ কিয়েভে সংশোধিত চুক্তির কাঠামো এবং বিনিময়ে ইউক্রেনের কী প্রয়োজন সে বিষয়ে আলোচনা করবেন।
আজ বৃহস্পতিবার কেলোগের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, এই বৈঠক এবং সামগ্রিকভাবে আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতা ইউক্রেনের জন্য গঠনমূলক হওয়া জরুরি।
মার্কিন কর্মকর্তারা কি এখনো চুক্তিটি এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্পের এক উপদেষ্টা জেলেনস্কি সম্পর্কে বলেন, ‘অবশ্যই, আমাদের এই লোকটিকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’
চুক্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, যদিও ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে বিভাজন আরও গভীর হয়েছে। গতকাল বুধবার ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘নির্বাচনবিহীন একনায়ক’ বলে অভিহিত করেন। এর আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ট্রাম্প রাশিয়ার বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের ফাঁদে পড়েছেন। ইউক্রেনই যুদ্ধ শুরু করেছে—ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর জেলেনস্কি এই কথা বলেছিলেন।
গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা হিসেবে কয়েক হাজার কোটি ডলার দিয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে মার্কিন বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হবে, যাতে আমরা কোনো না কোনোভাবে এই অর্থ ফিরে পাই।’ তিনি কিয়েভকে যুক্তরাষ্ট্রকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ অধিকার প্রদান করতে চাপ দিচ্ছেন, যা ওয়াশিংটনের সহায়তার স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হবে।
এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি তাদের (ইউক্রেনকে) বলেছি, আমি চাই ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিরল পৃথিবী খনিজ চাই। আর তারা আসলে এটা করতে সম্মত হয়েছে, যাতে অন্তত আমরা বোকা না হয়ে থাকি। এমনটা না হলে আমরা আসলেই বোকা। আমি তাদের বলেছি, আমাদের কিছু পেতে হবে, কারণ আমরা এত অর্থ তাদের পেছনে (বিনা লাভে) খরচ করতে পারি না।’
চলতি মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চাই। যেখানে তারা আমাদের দেওয়া সহায়তার বিনিময়ে তাদের বিরল মৃত্তিকা খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ দেবে।’ তাঁর এই মন্তব্যের পর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি ট্রাম্পের লেনদেন ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিকে ‘খুব স্বার্থপর, খুব আত্মকেন্দ্রিক’ বলে সমালোচনা করেন।
তবে ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি আগ্রহী রাশিয়াও। পুতিনের বাহিনী এরই মধ্যে ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে, যেখানে বিরল খনিজের বিশাল মজুত রয়েছে। বর্তমানে তারা ইউক্রেনের একটি বিশাল লিথিয়াম খনি থেকে মাত্র চার মাইল দূরে অবস্থান করছে।