চীনকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ট্রাম্পের হুমকি, শেষ পর্যন্ত লড়বে বেইজিং

চীনা পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জবাবে মঙ্গলবার চীন জানিয়েছে, তারা ‘শেষ পর্যন্ত লড়বে’। এই উত্তেজনাপূর্ণ পাল্টাপাল্টি অবস্থান বিশ্ববাজারে আরও ধস নামিয়েছে এবং বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বিশ্ব অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে দেন নতুন শুল্ক ঘোষণার মধ্য দিয়ে। যদিও বাজারে বড় ধরনের দরপতনের পরও তিনি নিজের কড়া বাণিজ্যনীতি থেকে সরে আসার কোনো ইঙ্গিত দেননি।
চীন, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, পাল্টা ঘোষণা দেয় যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, যা কার্যকর হবে বৃহস্পতিবার থেকে। এতে দুই পরাশক্তির মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর, তিনি আবারও হুমকি দেন যে চীন যদি পিছু না হটে, তাহলে তিনি অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবেন এবং সবমিলিয়ে চীনা পণ্যের উপর মোট শুল্ক হবে ১০৪ শতাংশ।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চীনকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তারা এটা করতে পারে না। আমাদের একবারই সুযোগ আছে... এটা করতে পারা আমার জন্য গর্বের।’
চীন কড়া প্রতিক্রিয়ায় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ‘ব্ল্যাকমেইল’ করছে এবং তারা কখনোই এ ধরনের আচরণ মেনে নেবে না।
বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি নিজের পথে হাঁটতেই থাকে, চীন শেষ পর্যন্ত লড়বে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের প্রকৃতি উন্মোচন করল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক ব্যবস্থা আরও বাড়ায়, চীনও উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং নিজের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করবে।’
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবারও জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সংলাপে’ আগ্রহী এবং মনে করে, ‘বাণিজ্যযুদ্ধে কারও জয় হয় না।’
বাজারে ধস, আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা
ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বাজারে ইতিমধ্যেই বড় ধাক্কা লেগেছে। সোমবার হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ১৩.২ শতাংশ পতন হয়, যা ১৯৯৭ সালের এশীয় অর্থনৈতিক সংকটের পর সর্বোচ্চ। যদিও মঙ্গলবার কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়।
ওয়াল স্ট্রিটেও বড় ধস নামে; ডাও জোন্স ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক নিচে নামে।
মোট বাজারমূল্য থেকে ইতোমধ্যেই ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি উবে গেছে।
ট্রাম্প অবশ্য সোমবার বলেন, তিনি কোনো শুল্ক বিলম্বের কথা ভাবছেন না।
তিনি চীনের সঙ্গে কোনো আলোচনাও বাতিল করেছেন, তবে জানান, যে কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা করতে প্রস্তুত।
চীনে সোমবার শেয়ারবাজারে ধস নামার পর মঙ্গলবার বাজার খোলার আগে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, তারা সরকারি বিনিয়োগ তহবিল দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
টোকিওতে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়, কারণ মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, জাপান শুল্ক আলোচনায় ‘অগ্রাধিকার’ পাবে।
শনিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক পণ্যের উপর ১০ শতাংশ ‘বেসলাইন’ শুল্ক কার্যকর করেছে। বুধবার থেকে চীনের উপর ৩৪ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।
ফক্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, ‘ভালো আলোচনার মাধ্যমে আমরা কেবল শুল্ক কমিয়ে আনতে পারব।’
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেন, ‘শুল্ক স্থায়ী হতে পারে, আবার আলোচনাও হতে পারে, কারণ শুল্ক ছাড়াও আমাদের অন্য কিছু প্রয়োজন।’
মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দার আশঙ্কা
ট্রাম্প আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দুর্বল হবেন না! বোকা হবেন না!’
৭৮ বছর বয়সি এই রিপাবলিকান নেতা বিশ্বাস করেন, শুল্কের কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো আমেরিকায় ফিরে আসবে এবং দেশীয় শিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে।
তবে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ ট্রাম্পের এই ধারণাকে সমর্থন করেন না।
জেপি মরগান চেজের সিইও জেমি ডাইমন সতর্ক করে বলেন, মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে এবং শুল্কের কারণে মন্দা দেখা না গেলেও প্রবৃদ্ধি ধীর হবে।
রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজও জানান, সাধারণ ভোটারদের উপর এর প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, মন্দা শুরু হলে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জন্য ‘রক্তস্নান’ অপেক্ষা করছে।