রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

অতি তাপে মনের ক্ষতি সামাল দেবেন কীভাবে?

অতি তাপে মনের ক্ষতি সামাল দেবেন কীভাবে?

জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল হেলথ বিভাগের মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ শাবাব ওয়াহিদ বলেছেন, তাপ ও মানসিক অসুস্থতার মধ্যে সম্পর্কটি খুবই সূক্ষ্ম। ওয়াহিদ সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটরি হেলথ’-এ একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন তাপমাত্রার এক ডিগ্রি বৃদ্ধিও বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মতো অনুভূতি তৈরিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
কিছু গবেষক অনুমান করছেন, তাপ মস্তিষ্কের সংকেত আদান-প্রদানে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া তাপ মস্তিষ্কে প্রদাহের কারণও হতে পারে। কিন্তু আরেকটি বিশেষ তত্ত্ব হলো, তাপ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, ফলে মানসিক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়।


অতি তাপমাত্রায় মানসিক যে সমস্যাগুলো তৈরি হতে পারে

১. ঘুমের ব্যাঘাত : গরমে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যেমন অনিদ্রার সমস্যা। খারাপ ঘুম স্ট্রেস, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যাতে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে যেতে পারে।

২.পানিশূন্যতা: উচ্চ তাপমাত্রা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়, যা নেতিবাচকভাবে মেজাজ ও চিন্তাচেতনাকে প্রভাবিত করতে পারে। এমনকি হালকা ডিহাইড্রেশন মেজাজ ও সামগ্রিক চেতনাকে প্রভাবিত করে কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে।

৩.তাপের চাপ: গরম তাপমাত্রার সংস্পর্শে শরীরে শারীরবৃত্তীয় চাপের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, ঘাম ও অস্বস্তি দেখা যায়। বেশি তাপের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে বিরক্তি, ক্লান্তি ও সামগ্রিক মেজাজ নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটে পারে।

৪.আক্রমণাত্মক আচরণ: গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গরম আবহাওয়া, বর্ধিত আগ্রাসন ও হিংসাত্মক আচরণের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রা হতাশার অনুভূতি বাড়িয়ে তুলতে পারে, ফলে সংঘর্ষ ও আগ্রাসনের উচ্চ আশঙ্কা থাকে।

৫.সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডার: সাধারণত দেখা যায়, কিছু মানুষ শীতকালের তুলনায় গরমকালে ঋতুগত সংবেদনশীল ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়। অতিরিক্ত তাপে অস্বস্তি, শারীরবৃত্তীয় চাপ, হতাশা, অলসতা ও সামগ্রিকভাবে মনমেজাজে খিটখিটে ভাব বেশি অনুভূত হয়।

৬.সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: আবহাওয়ায় তাপমাত্রা বেশি থাকলে মানুষের বাইরের কাজকর্ম ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া কমিয়ে দেয়। ফলে ব্যক্তি একাকিত্ব ও বিষণ্নতায় ভুগতে পারে। ভালো মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সামাজিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গরম আবহাওয়ার কারণে সামাজিকীকরণের সুযোগ কমে যায়, ফলে মনে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়।

৭.জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা: দেখা গিয়েছে, গরম তাপমাত্রা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্মৃতিশক্তি, মনোযোগসহ জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা নষ্ট করে। এই ঘাটতিগুলো হতাশা ও চাপের অনুভূতিকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

৮.দুর্বলতা: কিছু ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গরম তাপমাত্রার নেতিবাচক প্রভাবগুলো বেশি দেখা যায় এবং তা ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা, বয়স এবং কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসায় সংবেদনশীল প্রভাব দেখা দেয়। এ জন্য ব্যক্তি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

৯.আত্মহত্যার প্রবণতা: তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য অপরাধ ও সহিংসতার পাশাপাশি আত্মহত্যার হারও বেড়ে যায় বলে অনেক গবেষক দাবি করছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে গড় তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে আত্মহত্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্পর্ক আছে। এই দুই দেশে অন্তত ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধির সঙ্গে আত্মহত্যা ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।

এই অতি তাপে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে যা করণীয়

১.বর্তমানে থাকুন: মানসিকভাবে যেকোনো পরিস্থিতিতে বর্তমান মুহূর্তে উপস্থিত থাকার চর্চা করুন। আপনার ইন্দ্রিয়ের ওপর ফোকাস করুন এবং আপনার শরীর গরমে কেমন অনুভব করছে, তা পরিবর্তন করার চেষ্টা না করে পর্যবেক্ষণ করুন।

২.ইতিবাচক স্ব-কথোপকথন: নিজেকে আশ্বস্ত করতে ইতিবাচক স্ব-কথোপকথন ব্যবহার করুন যে আপনি নিজেকে পরিচালনা করতে পারেন এবং শান্ত থাকতে পারেন। নিজেকে অতীতের অভিজ্ঞতার কথা মনে করিয়ে দিন, যেখানে আপনি অনুরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছিলেন।


৩.গ্রহণযোগ্যতা: সবার আগে বর্তমান পরিস্থিতিকে মেনে নিন। নিজেকে বলুন, আপনি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তবে এ পরিস্থিতিতে আপনার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। অস্বস্তিকর এই পরিস্থিতিকে একটি অস্থায়ী চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করুন, সেটা মোকাবিলা করুন। মনে করুন এবং বিশ্বাস করুন যে এই পরিস্থিতি কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।

৪.কল্পনা করুন: আপনি চোখ বন্ধ করে নিজেকে কোনো সমুদ্রসৈকত বা ছায়াময় আরামদায়ক জায়গায় কল্পনা করুন। ভিজ্যুয়ালাইজেশন আপনার মনকে উত্তাপ থেকে বিভ্রান্ত করে প্রশান্তির অনুভূতি তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।


৫.নমনীয় থাকুন: বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে নমনীয় রাখুন। আপনার দৈনন্দিন রুটিন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে দিনের যে সময়টা তুলনামূলক কম গরম থাকে, সেই সময় বাইরে বের হওয়া ও বাকি কাজ করার চেষ্টা করুন।

৫.সাহায্য কামনা করুন: আপনি কেমন অনুভব করছেন, সে সম্পর্কে বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলুন। কখনো কখনো আপনার উদ্বেগগুলো ভাগ করে নেওয়ায় চাপ কমাতে পারে এবং আপনাকে আরও সমর্থিত বোধ করতে সহায়তা করতে পারে।
 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়